বিশেষ প্রতিবেদক
শফিকুর রহমান খোকন। এলাকায় টেন্ডার খোকন নামে সবাই জানে। খোকন ঢাকার বিক্রমপুরের ফজলুর রহমানের ছেলে। বর্তমানে তিনি সিলেটের খাদিমপাড়ার ৬নং রোডের মীর মহল্লা এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করছেন। টেন্ডার বলতে আমরা দরপত্র বুঝলেও এই টেন্ডার সেই টেন্ডার না। তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের হয়ে এলাকায় চাঁদাবাজী করতেন তাই তারই ঘনিষ্টজন তার এই চাঁদাবাজীর নাম দিয়েছেন ‘টেন্ডার’। তার এই চাঁদাবাজী সুবাধে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতি এবং সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মেজরটিলা এলাকার ত্রাস জাহাঙ্গীরের সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। রাতারাতি হয়ে উঠেন জাহাঙ্গীরের সকল অপকর্মের একান্ত সহযোগী। পালাবদলে তিনি এখন সিলেট বিএনপির কিছু লোকের সাথে সখ্যতা গড়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মেজরটিলা এলাকায় জাহাঙ্গীরের ছিল একক রাজত্ব। জমিদখল, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজি, টিলা দখল নিয়ন্ত্রণ করতেন শফিকুর রহমান খোকন। বিগত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমলে মেজরটিলা থেকে খাদিমপাড়া এলাকায় কেউ বসতবাড়ি কিংবা কোন জায়গা বেচাকেনা করতে গেলে জাহাঙ্গীর বাহিনীকে চাঁদা দিতে হত। কেউই নিজের জমির উপরে কোন কাজই করতে পারতেন না। এলাকায় জাহাঙ্গীরের হয়ে সবার আগে ভূক্তভোগীদের কাছে চাঁদার জন্য হাজির হত এই টেন্ডার খোকন। চাহিদা মতো চাঁদা না পেলে খোকনের নেতৃত্বে র্টাগেটকৃত ব্যক্তিকে উঠিয়ে নিয়ে আসা হতো জাহাঙ্গীরের গোপন টর্চার সেলে। সেখানে খোকনের নেতৃত্বে চলতো নির্যাতন। হত্যার হুমকি দিয়ে ওই ব্যক্তির স্বজনদের কাছ থেকে চাহিদামতো চাঁদা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হতো। মামলা না করতে নেওয়া হতো সাদা স্ট্যাম্পে সাক্ষর। এরকম একাধিক অভিযোগ খোকনের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে, মেজরটিলা এলাকায় জোরপূর্বক কয়েকটি টিলা জবর দখল করে সেই সব টিলা কেটে প্লট বানিয়ে বিক্রি করে জাহাঙ্গীর বাহিনী কয়েক শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই খোকনের নেতৃত্বে।
গত বছরের শেষ দিকে একটি টিলা ধসের ঘটনায় জাহাঙ্গীর বাহিনীর নাম চলে আসে। তখন এলাকাবাসী বিক্ষুদ্ধ হয়ে নানা রকম ক্ষোভ প্রকাশ করলেও ভয়ে কেউই মুখ খোলেনি। পরে ঘটনাটি খোকন ও জাহাঙ্গীর মিলে ধামাচাপা দিয়ে দেয়। কারণ জাহাঙ্গীর তখন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর। জাহাঙ্গীর আলম সিসিকের কাউন্সিলর হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন খোকনসহ তার বাহিনীকে দমনের বদলে আরো শেল্টার দিতে শুরু করে। খোকনের নেতৃত্বে বাড়তে থাকে চাঁদাবাজী। খোকন হয়ে উঠে আরো বেপরোয়া।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও এখনো বহাল তবিয়তে আছেন শফিকুর রহমান খোকন ওরফে টেন্ডার খোকন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শাহপরাণের বিআইডিসি এলাকায় টেন্ডার খোকনের একটি অটোরিক্সার গ্যারেজ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেখানে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের মাদক সেবনের আসর বসতো। আওয়ামী সরকারের পতনের পর এই খোকন তার নিজের বাসায় স্থানীয় অনেক আওয়ামী লীগের কয়েক নেতাকে আশ্রয় দিয়ে সীমান্ত পার করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার উপর।
অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী বা অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে বিএনপিতে না নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ওয়ার্ড থেকে জাতীয় পর্যায় এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ওয়ার্ড থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যন্ত কোনো স্তরেই কমিটিতে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী বা অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে যোগদান করানো যাবে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এক সময়ে আওয়ামী লীগের চাঁদাবাজ খোকন পালাবদলে এখন নিজে দল পাল্টাতে স্থানীয় কিছু বিএনপির নেতাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। তাদের সাথে সম্পর্কের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সে এখন দল বদলের চেষ্টা চালাচ্ছে।
এক সময়ের আওয়ামী লীগের চাঁদাবাজ খোকনকে বিএনপিতে পূর্নবাসন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন স্থানীয় কিছু বিএনপির নামধারী নেতা। তারা রাত হলেই খোকনের সেই অটোরিক্সার গ্যারেজে মাদকের আসরে যোগ দিচ্ছেন। আর এখন যারা খোকনকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন, বিগত সরকারের আমলে তারা দিনে বিএনপি আর রাতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন বলে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে।
বর্তমানে খোকনকে সিলেট মহানগর বিএনপির ৩৪নং ওয়ার্ডে পূর্ণবাসন করতে অর্থনৈতিক লেনদেনও চালিয়ে যাচ্ছে টেন্ডার খোকন। বিষয়টি একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের চিহ্নিত এই চাঁদাবাজকে বিএনপিতে পূর্ণবাসন করা নিয়ে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের তৃণমূল নেতা কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
শফিকুর রহমান খোকন ওরফে টেন্ডার খোকনের ফেইসবুক ঘুরে দেখা যায়, এক সময় খোকন যেখানে তার ফেইসবুকে আওয়ামী লীগ আর ৩৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীরের বন্ধনায় ভরপুর করে রাখতেন, এখন রাতারাতি তা পাল্টে গেছে। এখন খোকন নিজের ফেইসবুকে বিএনপির বিভিন্ন কর্মকান্ডের গুণকির্তন করে যাচ্ছেন। যাতে প্রমান হয় সে বিএনপির একজন বড় মাপের বিশাল নেতা!