বিশেষ প্রতিবেদক
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১৯নং ওয়ার্ডের সদ্য অপসারিত কাউন্সিলর এস এম শওকত আমিন তৌহিদ ২০২৩ সালে নিকজিশনের নির্বাচনে কাউন্সিল হওয়ার পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠেন। টাকা কামানোর নেশায় জড়িয়ে পরেন বিভিন্ন অপকর্মে। সেই সুবাদে সিসিক থেকে তাকে বরাদ্ধ দেয়া অফিসটিকেও পরিণত করেছিলেন আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় এবং নিজের ‘টর্চার সেল’।
৫ আগস্টের পর এবার এসব তথ্য তুলে ধরেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দীর্ঘদিন ধরেই চোরাচালানের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে নগরীর টিলাগড় ও শিবগঞ্জ পয়েন্ট। চিনিসহ বিভিন্ন ভারতীয় পণ্য এই সড়ক দিয়ে নিয়ে আসতো চোরাকারবারীরা। এই চোরাচালানের জন্য সিলেটজুড়ে গড়ে উঠেছিলো একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অপসারিত কাউন্সিলর এস এম শওকত আমিন তৌহিদসহ ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার সুবাদে তৌহিদ তার সিসিক থেকে তাকে বরাদ্ধ দেয়া অফিসের পিছনের রুমকে বানিয়েছিলেন ‘টর্চার সেল’। অফিসের এই রুমে প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেয়া হতনা।
জানা গেছে, এস এম শওকত আমিন তৌহিদের সাথে টিলাগড়ের আজাদ গ্রুপের একটি চোরাচালান সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। চোরাচালানের সব বাটবাটোয়ারা এখান থেকেই হত। এছাড়াও রাতে এখানে বসতো বিদেশি মদের আসর। এই রুমে অনেককেই মধ্যরাত পর্যন্ত পেটানো হত। সেই সময়ে সেখানে কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাদেরও আনাগোনা ছিলো।
স্থানীয়দের অভিযোগ-আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে লম্বা কালো রঙের একটি জিপ গাড়িতে করে তিনিসহ টিলাগড়ের নাজমুল, রঞ্জুসহ লোকজন নিয়ে গভীর রাতে এখানে আসতেন, এবং বিভিন্ন লোকদের নির্যাতন করতেন। সমঝোতা হলে এখান থেকেই মুক্তি দিতেন। না হলে নির্যাতন শেষে শাহপরাণ (রা.) থানায় হস্তান্তর করতেন। তার এই ‘টর্চার সেল’ এ নির্যাতনের শিকার হয়ে আজ অনেক ঠিকাদার দেশ ছাড়া হয়েছেন। এই রুমে তিনি গোপণ বৈঠক করতেন। বিভিন্ন সালিশ বৈঠক শেষে এই রুমে নিয়ে মোটা অংকের টাকা দিয়ে অনেক চোরাকারবারিদের টিলাগড় গ্রুপের হাত থেকে ছাড়িয়ে দিতেন।
একটি সূত্র জানিয়েছে, কাউন্সিলর তৌহিদ ১৯নং ওয়ার্ডে রাস্তা সম্প্রসারণ ও ড্রেন নির্মাণের সময় প্রতিটি বাড়িতে লাল দাগ দেন। এর পরেই তিনি শুরু করেন বাণিজ্য। যারা টাকা দেয় তারা রক্ষা পায় আর যারা টাকা দেয় না তাদের বাড়িঘর ভেঙ্গে ফেলা হয়। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় এক বাসিন্দাকে তিনি তার এই ‘টর্চার সেল’ বন্দি রেখে ওই বাসিন্দার সিমানা ভাঙার!
এছাড়াও গেলো বছরের জুলাই মাসে মধ্যরাতে রনি নামক এক ছাত্রদল কর্মীকে বেধরক মারপিট করেন।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ওই বাসিন্দা (মুরব্বী) জানান, আমার ছেলে মেয়ে সবাই প্রবাসে। একদিন সকালে কিছু শ্রমিক আমার বাড়ির সিমানা কোনো কিছু না বলে ভাঙতে শুরু করে, আমি তাতে বাধা দিলে কাউন্সিলর তৌহিদ আমাকে ডেকে নিয়ে তার অফিসের ভিতরের রুমে আলাপের জন্য বসতে বলে। এর পর তিনি আমাকে বলেন আমি একটি কল করে আসি বলে আমাকে বাহিরে থেকে তালা বদ্ধ করে চলে যান। আধা ঘন্টাপর আমি সেখান থেকে বাসায় এসে দেখি আমার বাসার সিমানা ভাঙা। বিষয়টি আমি আমার ছেলেদের সাথে আলাপ করলে তারা সবুর করতে বলে। আমিও আমার আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি। তিনি বিচার করেছেন।
দপ্তরী পাড়ার এক ভুক্তভোগী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি কামরুনাহার তামান্না বলেন, কাউন্সিলর তৌহিদ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অধিগ্রহণ না করে বিনা নোটিশে আমার বাসার বাউন্ডারি দেয়াল ভাঙেন। ২ বছর থেকে দেয়াল না থাকায় আমার গোটা পরিবার নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি। এই অবস্থায় আমি নিরাপত্তা পেতে আদালতে মামলা দায়ের করেছি। তার ভয়ে ১৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা কোন কথা বলতো না।
এ বিষয়ে ১৯নং ওয়ার্ডের সদ্য অপসারিত কাউন্সিলর এস এম শওকত আমিন তৌহিদের মুঠোফোনে কল করলে তার মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
বিএনপিতে যোগ দেয়ার চেষ্টায় মরিয়া অপসারিত কাউন্সিলর তৌহিদ (পর্ব-১)