বিশেষ প্রতিবেদক
এসএসসি রেজাল্টের জাল সনদ ব্যবহার করে সিলেট সদর সাবরেজিস্ট্রারী অফিসে দলিল লেখকের লাইসেন্স করার উঠেছে এক দলিল লেখকের বিরুদ্ধে। তিনি পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিজেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা পরিচয়ে সিলেট সদর সাবরেজিস্ট্রারী অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে দলিল লেখকের এই লাইসেন্সটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিবন্ধন অধিদপ্তর থেকে বাগিয়ে নেন। পট পরিবর্তনের পর নিজের খোলসও পাল্টিয়ে নেন। বর্তমানে তিনি সিলেটের পদধারী স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা। বর্তমান পদধারী এই স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৩ তার দলিল লেখকের লাইসেন্স জন্য সুপারিশও করেছিলেন আওয়ামী লীগের এক মন্ত্রী। এই লাইসেন্সের বদৌলতে প্রায় ১ যুগ ধরে তিনি এখনও বহাল তবিওতে এখনও দলিল লেখক হিসেবে রয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকার পালাবার পর তাকে সিলেট বিমানবন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক করায় সিলেটের গণমাধ্যম গুলো ঢালাওভাবে তার বিরুদ্ধে ‘ডেভিল আখ্যা’ দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। এসব বিষয় নিয়ে ২০ এপ্রিল রোববার শফিকুল ইসলাম সুজন নামক একজন ব্যক্তি অভিযোগ করেন সিলেট জেলা সাবরেজিস্ট্রার বরাবর। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি করে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন সিলেট জেলা রেজিস্ট্রার মো. জহুরুল ইসলাম। এই অভিযোগের সূত্র ধরে মিলে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।
তিনি আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে পরিচিত সিলেট দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রোটারিয়ান রাশেদুজ্জামান রাশেদ। (সনদ নং-৩১৭) । এক সময়ের স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হলেও এখন খোলস পাল্টে বনে গেলেন সিলেট বিমানবন্দর থানা শাখার স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক। তাকে স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক করায় এবার দলের মধ্যেও বিদ্রোহের আভাস মিলেছে। বিমানবন্দর থানা শাখা কমিটি গঠনের পর অনুপ্রবেশকারিদের পদ দেয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে সিলেট বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে। এসকল ডেবিলদের হলফনামাও প্রকাশ পাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। বিএনপির রাজনীতিকে কলঙ্কিত করতে এসব ডেভিলরা আওয়ামী লীগের এজেন্ট হয়ে দলে যোগদান করছে বলে অনেকে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডেভিল রাশেদ সিলেট সদর সাবরেজিস্ট্রারী অফিসের দলিল লেখকের লাইসেন্সটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিবন্ধন অধিদপ্তর থেকে সংগ্রহ করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৩ তার দলিল লেখকের লাইসেন্স জন্য সুপারিশ করেন আওয়ামী জোটের নেতা রাশেদ খান মেনন। তিনি আওয়ামী সরকারের আমলে ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি। ২০১৩ সালে ছিলেন সংসদ সদস্য। ওনার সুপারিশের বদৌলতে পেয়ে যান দলিল লেখকের লাইসেন্স। প্রায় ১ যুগ ধরে তিনি এখনও এই লাইসেন্সের কারনে দলিল লেখক হিসেবে বহাল রয়েছেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ডেভিল রাশেদুজ্জামান রাশেদ যখন দলিল লেখক লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন। আবেদনে তিনি সিলেটের সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দি এইডেড হাই স্কুলের এসএসসি পাস সার্টিফিকেট জমা দেন। সাল- ২০০৬, রোল নম্বর ৩০৭৬৭৯ এবং রেজিষ্ট্রেশন নং ১০৩০৪৩/২০০৪-০৫ উল্লেখ করেন। কিন্তু সুনামধন্য এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে যোগাযোগ করলে এই নাম, এই রোল, এই রেজিস্ট্রেশনের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি! যা মিলে ২০০৬ সালে মানবিক শাখায় ৫০ জন, বিজ্ঞান শাখায় ১০৯ জন এবং কমার্স শাখায় ৭০ জন পাশ করেন। সিলেট শিক্ষা বোর্ডেও একই অবস্থা।
একটি সূত্র জানিয়েছে, গোলাপগঞ্জের হেতিমগঞ্জের রাশেদুজ্জামান রাশেদ ছিলেন স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা। সিলেট নগরের এয়ারপোর্ট থানাধীন খাসদবির এলাকায় তার বর্তমান বসবাস। রাশেদুজ্জামান রাশেদ ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিছবাহ সিরাজে অতি ঘনিষ্টজন। পলাতক সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামানেরও ছিলেন আস্তাভাজন ও একনিষ্ঠ ভক্ত। বিগত সিলেট সিটি নির্বাচনে আওয়ামী মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের পক্ষে প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণাও চালান তিনি।
৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কিছুদিন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান এই রাশেদ। সম্প্রতি তিনি আবার প্রকাশ্যে এসে শুরু করে দিয়েছেন বিএনপির রাজনীতি। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা থেকে হয়ে গেছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা। সাবেক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রাশেদুজ্জামান রাশেদকে সম্প্রতি সিলেট বিমানবন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক করা হয়েছে। বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে রাশেদুজ্জামানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের নামে সিলেট সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বিভিন্ন জাল দলিল সৃজন করে সরকারি সম্পত্তি, চা-বাগানের জায়গা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের নামে রেজিস্ট্রারী করার ও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
এদিকে বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, তার এসব অভিযোগ কেন্দ্র পর্যন্ত গিয়েছে। রাশেদুজ্জামান রাশেদকে স্বেচ্ছাসেবক দলের সিলেট বিমানবন্দর থানা আহ্বায়কের পদ থেকে অপসারন করা হবে। এবং তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে রাশেদুজ্জামান রাশেদকে কল করলে তিনি বলেন, তিনি মিডিয়া ট্রায়েলের শিকার। এসব অভিযোগ মিথ্যা। তবে তিনি এও স্বীকার করেন, একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি করে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের প্রক্ষিতে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সিলেট জেলা রেজিস্ট্রার মো. জহুরুল ইসলাম।
আগের প্রকাশিত প্রতিবেদন পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
সিলেটে তোলপাড় : ডেভিল রাশেদ এখন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক