বিশেষ প্রতিবেদক
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সিলেট মহানগরের ৬ থানার শাখার কমিটি টাকার বিনিময়ে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী ও সদস্য সচিব আফসর খানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছেন পদবঞ্চিত নেতা কর্মীরা।
এই দুই নেতা টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের লোকজনদের কমিটিতে স্থান দিয়েছেন বলে কদিন থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়েছে। একের পর এক ডেভিলদের হলফনামা প্রকাশ পাচ্ছে ফেসবুকে। অভিযোগ উঠেছে ডেভিলদের পুনর্বাসন এবং দলের দুর্দিনের ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না!
দলের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, টাকার বিনিময়ে অনুপ্রবেশকারী ও বিগত ১৭ বছর নিস্ক্রীয় থাকা নেতাদের দিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৬ থানা শাখার আহবায়ক কমিটি দেয়া হয়েছে। কমিটি দিতে গিয়ে দুই নেতার পকেটে ঢুকেছে লাখ লাখ টাকা।
সুত্র জানায়, আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ক পদে এ দুই নেতা নিয়েছেন ৫০ হাজার টাকা করে। সদস্য সচিব পদের জন্য নিয়েছেন ৩০ হাজার টাকা আর সদস্যদের বেলায় নিয়েছেন ১০ হাজার টাকা করে।তবে পদ পদবীতে আসিন হওয়া নেতারা বলছেন, কোনো টাকা দিয়ে তারা পদ পাননি। দলের কাজ করে পদ পেয়েছেন। কিন্তু ত্যাগী ও পদবঞ্চিত নেতা কর্মীরা বলছে অন্য কথা। তাদের ভাষ্যমতে, বিগত ১৭ বছর উনারা কোথায় ছিলেন? রাজনীতির ময়দানে নাকি আওয়ামী লীগের ড্রইং রুমে?
একটি সূত্র জানিয়েছে, সদ্যঘোষিত আহবায়ক কমিটিকে কেন্দ্র করে মহানগরের ৬ টি থানার ত্যাগী পদবঞ্চিত নেতা ও পদ পদবী পাওয়া নেতারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। যে কোনো সময় এই দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গ-সংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
ইতোমধ্যে পদবঞ্চিত ত্যাগী নেতা কর্মীরা নগরের বিভিন্ন স্থানে ঝাড়ু মিছিল করে সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী ও সদস্য সচিব আফসর খানের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়ে তাদের দেয়া কমিটি বাতিলের দাবী জানিয়েছন। সিলৈট নগরীর টিলাগড়, বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, শাহপরান গেইটসহ বিভিন্ন এলাকায় এই বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।
পদবঞ্চিত নেতাদের দাবী পতিত ফ্যাসিবাদের আমলে যারা জেল জুলুম, মিথ্যা মামলা, বাড়িঘর ভাংচুরসহ নানাবিধ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদেরকে কমিটিতে না রেখে সুবিদাভোগীদের দিয়ে এই পকেট কমিটির করা হয়েছে।
গেলো সাপ্তাহের মঙ্গলবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কমিটি প্রকাশ হলে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মঙ্গলবার রাতেই সদ্যঘোষিত কমিটি বিলুপ্তির দাবিতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ মিছিল করেন পদবঞ্চিত নেতা কর্মীরা। সেই সাথে কমিটিতে স্থান পাওয়া আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের তথ্য প্রমানসহ ফেসবুকে ভাসতে থাকে পোষ্ট ও মন্তব্য।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বেচ্ছাসেবক দলের একাধিক নেতা বলেন, সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলকে বিভক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে বিগত ১৭ বছর যারা বিএনপির রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিল এবং ফ্যাসিবাদের পক্ষে ছিল তাদেরকে দিয়ে বিতর্কিত কমিটি করা হয়েছে। তারা বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে কমিটি করা হয়েছে যেখানে ত্যাগীদেরকে মূল্যায়ন করা হয়নি।
সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য মেহেদি হাসান সপু তার ফেসবুকে লাইভে এসে বলেন, রাজনীতি করতে গিয়ে তার সব হারিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নির্যাতনে তিনি বাড়িঘর ছেড়ে পলাতক ছিলেন। তাকে বিভিন্ন মামলায় আসামী করা হয়েছে। তার উপর ছোড়া গুলি, তার মায়ের শরীরে লেগেছে অথচ থাকে মুল্যায়ন করা হয়নি।
আরেক সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য দুলালও তার ফেসবুক লাইভে এসে মহানগরের আহবায়ক ও সদস্য সচিবের কুকীর্তি তুলে ধরে লাইভে এসে বলেন, বর্তমান কমিটি দিতে গিয়েকে কত নিয়েছেন তা জানা আছে। রাজপথে থেকে আন্দোলন করেছি, কখনও দালালি করিনি। যার জন্য সংসার ছেড়ে বনে জঙ্গলে থাকতে হয়েছে। অথচ আজ যারা আওয়ামী লীগের দালালি করেছে তাদের মুখে হাসি ফুটেছে।
এছাড়া ৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সাইফুল ইসলাম উজ্জ্বল বলেন, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সিলেট মহানগরের সদস্য সচিব আফসর খান তাকে ১ লাখ টাকা দিলে কমিটির আহবায়ক বানিয়ে দিবেন বলে জানান। উজ্জল এতে রাজি না হওয়াতে তাকে কমিটিতে রাখা হয়নি বলে অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সিলেট মহানগরের আহবায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের আমলে সিলেট জেলা যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের মেজরটিলা বাসায় আড্ডা দিতেন। তিনি জাহাঙ্গীরের কথামতো কমিটিতে ছাত্রলীগ, যুবলীগের কয়েকজনকে স্থান দিয়েছেন। শাহপরান থানা স্বেচ্ছাসেবক দলে ডেভিলদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এই কমিটিতে দলের ত্যাগীদেরকে অমূল্যায়ন করা হয়েছে, দলের কর্মীদেরকে বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগ যুবলীগ নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠন হয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন থেকেই রাজপথে আছি, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি ও সিলেটের বিএনপির সিনিয়র নেতাদের এই বিষয়টি অবগত করছি বিষয়টি দেখার জন্য। অন্যথায় আমরা আন্দোলন গড়ে তুলব।
শুধু সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য মেহেদি হাসান সপু, সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য দুলাল ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সাইফুল ইসলাম উজ্জ্বল নয়। এমন অনেক নেতা কর্মী বিগত ১৭ বছরের আওয়ামী নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তাদের ফেসবুকে পোষ্ট দিচ্ছেন।
বিষয়টি জানতে সিলেট সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী ও সদস্য সচিব আফসর খানকে কল করলে তাদের মুঠোফোন ব্যস্ত দেখায়।
এর আগে প্রকাশিত প্রতিবেদন পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
সিলেট স্বেচ্ছাসেবক দল : হুংকার দিয়ে পরিচয় জানালেন ছাত্রলীগের রাজু
সিলেটে তোলপাড় : ডেভিল রাশেদ এখন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক
শাহপরান থানা স্বেচ্ছাসেবক দলে ডেভিল : কমিটি বাতিলের দাবিতে ঝাড়ু মিছিল
সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সপুর ফেসবুক লাইভ
সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য দুলাল ফেসবুকে লাইভ