বিশেষ প্রতিবেদক
ছাত্র-জনতার সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় আতঙ্কের নাম হয়ে উঠে ছিলেন সিলেট জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম। গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের নলজুড়ী গ্রামের মৃত সামসুল হকের ছেলে আবুল কাশেম বিএনপি নেতা হলেও আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ অর্থদাতা হিসেবেও তিনি পরিচিত। সিলেট জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম গত ৫ আগস্টের পর থেকে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে জাফলং এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব গড়ে তুলেন। অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন ও ভারতীয় চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ এবং সংখ্যালঘু পরিবারের জমি দখলসহ একাধিক হামলার ঘটনায় আলোচিত তিনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আবুল কাশেমকে জেলা বিএনপি’র ক’জন নেতা ও যুবদলের ক’জন নেতারা শেল্টার দিয়ে আসছেন। ফলে তার বিরুদ্ধে স্থানীয় থানা পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট দিয়ে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণকারী হোতা হিসেবে পরিচিত আবুল কাশেম বিপুল পরিমাণ কালো টাকায় গড়ে তুলেছেন কোটি কোটি টাকার সম্পদ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়ের করা এক মামলায় বলা হয়, কাশেম সরকার ঘোষিত “পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা” জাফলং-ডাউকি ও পিয়াইন নদীর আশপাশ থেকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন করে আসছেন। যা পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ধারা ৫ লঙ্ঘন এবং একই আইনের ১৫(১) ধারার টেবিলের ২ নম্বর ক্রমিক অনুযায়ী এই অপরাধের ভিত্তিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে গোয়াইনঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। (এফআইআর নং-৩৫/৯০, তারিখ- ২৫/০৩/২০২৫)। এই মামলার পর আবুল কাশেম পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন সহকারী পরিচালকের ওপর হত্যার হুমকি দেন।
গত ২৭ এপ্রিল রোববার সন্ধায় সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার শুক্রবারি বাজার থেকে পরিবেশের মামলায় ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালকে হুমকির অভিযোগে তাকে আটক করে সেনাবাহিনীর একটি টিম।
সূত্র জানিয়েছে, কাশেমের ডানহাত হিসেবে পরিচিত শাহেদ আহমেদ লিটন ওরফে বাবলা, দু’জন মিলে গোয়াইনঘাটে মাদক ও চোরাচালানের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।
স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, সিলেট বিএনপির শীর্ষ নেতারা আবুল কাশেমকে একাধিকবার সতর্ক করলেও তিনি কোনো কথায় কর্ণপাত করেননি। বরং অবৈধ অর্থবলের জোরে দলের ভেতরেও ভয়ভীতি ছড়িয়েছেন। এমনকি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও তিনি বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করিয়ে এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডারদের ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে দমন করেছেন।
গত বছরের ৬ নভেম্বর বিজিবি-৪৮ ব্যাটালিয়নের অভিযানে রাধানগর এলাকা থেকে ৮ কোটি টাকার ভারতীয় চোরাই পণ্যের চালান জব্দ হয়, যার পেছনে কাশেম ও শান্তিনগরের জয়দুল হোসেনের নাম উঠে আসে। আবুল কাশেমের চক্র তামাবিল স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে চাঁদা আদায় করছে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকেই মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে।
এদিকে, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডের জরিত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগে সিলেট জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেমকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন। ৯ জুন সোমবার রাতে যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূইয়ার স্বাক্ষরিত এক নোটিশে তাকে বহিস্কার করার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
নোটিশে আরো বলা হয়েছে, বহিষ্কৃত আবুল কাশেমের কোন ধরনের অপকর্মের দায়-দায়িত্ব দল নিবেনা। যুবদলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তাদের সাথে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।