নিউজ মিরর ডেস্ক
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন নদী থেকে বোমা মেশিন দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। অধিক মুনাফার লোভে বিধিবর্হিভূতভাবে ব্যবসায়ীদেরকে বালু উত্তোলনে সহায়তা করছেন ইজারাদার।
বোমা মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে নদী তীরবর্তী বাড়িঘর, ফসলি জমি ভাঙন ও পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা এ ব্যাপারে একাধিকবার অভিযোগ করা সত্তেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না উপজেলা প্রশাসন।
বড়গাং নদী জৈন্তাপুর উপজেলার ১নং নিজপাট এবং ২নং জৈন্তাপুর ইউনিয়ন অংশে প্রবাহিত। বালু উত্তোলনের অধিকাংশ জায়গা নিজপাট ইউনিয়নের আওতাভূক্ত। নদীর দু-ধারে রয়েছে লক্ষীপ্রসাদ, রূপচেং, গোয়াবাড়ী, পাখিবিল, মাঝরবিল, কালিঞ্জিবাড়ী, হর্ণি, বাইরাখেল, নয়াগ্রাম সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের শহস্রাধিক পরিবারের বসতি। এসব গ্রামের মানুষের আয়ের প্রধান উৎস কৃষি। বিশেষ করে বৃহত্তর সিলেটের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সীম এবং বরবটি চাষ হয় এই অঞ্চলে। অথচ বালু উত্তোলনের নামে এসকল কৃষি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
দীর্ঘ কয়েক বছর বড়গাং নদীর ইজারা বন্ধ থাকায় সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হলেও ২০২৪ সালে সরকারীভাবে ইজারা প্রদান করা হয়। কিন্তু ইজারাদার কিংবা বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা কোন রকম সরকারী নীতিমালা মানছেন না মর্মে অভিযোগ উঠেছে। বালু উত্তোলকারী শ্রমিকরা রীতিমত নদীর পাড় কেটে বালু আহরণ করছেন। শুধু তাই নয় তাদের থাবা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না নদী পাড়ের কৃষি জমি, বাড়ীর আঙ্গিনা। এবার তারা বড়গাং নদীর উজানে মাঝরবিল গ্রামের গরুরঘাট এ বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করছেন।
বালু মহাল লিজ প্রদানে ইজারাদার এবং সরকার পক্ষের দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ১১ নং কলামে উল্লেখ রয়েছে, ‘নদী গর্ভে এমন কোন যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না, যা দ্বারা জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন ঘটে, জান-মালের ক্ষতি সাধিত হয় বা পরিবেশ বিপর্যন্থ্য হয়, নদীতে ড্রেজার বা বোমা মেশিন ব্যবহার করলে সরকার কর্তৃক ক্ষমতা প্রদত্ত আইএসও ১৯৭৬ অনুযায়ী ইজারাগ্রহীতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ কিন্তু নদীর পাড় কাটা, ফসলী জমি থেকে বালু উত্তোলন এবং বোমা মেশিন ব্যবহার সহ বিধিবর্হিভূত বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে প্রশাসনের উদাসীনতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
সর্বশেষ গত ১০ ফেব্রুয়ারি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে গণস্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট দাখিল করা হয়।
এব্যাপারে বড়গাং নদীর ইজারাদার ইসমাইল হোসেনের সাথে আলাপকালে তিনি বোমা মেশিন চালনায় সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করে বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কিছুদিন আগে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বোমা মেশিন বন্ধ করে দেন। পরে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রদত্ত বোমা মেশিন চালানো সংক্রান্ত অনুমতি পত্র প্রদর্শন করলে তিনি পূনরায় বোমা মেশিন চালনার মৌখিক অনুুমতি প্রদান করেন।
তবে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জর্জ মিত্র চাকমার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ইজারাদারের সাথে পাথর উত্তোলন সংক্রান্ত কোন আলোচনা হয়নি। বড়গাং নদীতে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা প্রদান করা হয়েছে, পাথর উত্তোলনের জন্য নয়। কেউ যদি বালুর সাথে পাথর আহরণ কিংবা বোমা মেশিন ব্যবহার করে থাকে তবে এবিষয়ে আমার জানা নেই। এলাকাবাসীর অভিযোগ যদি সঠিক হয়, তবে খুব শিগরই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।