বিশেষ প্রতিবেদক
নগরীর বালুচর এলাকার একটি বাড়িতে ডাকাতিকালের সিসিটিভি ফুটেজের একটি ভিডিও নিউজমিরর ফেসবুক পেইজে ‘সিলেটে ডাকাতি’ শিরোনামে গত ২৩ মার্চ রাতে প্রকাশিত হয়েছিলো। ঘটনা গেলো বছরের ৫ আগস্টের। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের পর মুহুর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। দেশ-বিদেশের নেটিজেনরা এই ভিডিও দেখে ডাকাতির বিষয়ে মন্তব্যে ঝড় তুলেন এবং ইনবক্সে তথ্য দেয়া শুরু করেন।
সিলেট মহানগর ছাত্রদলের পরিচয়দানকারি এক কর্মী মিজান এ ঘটনা ঘটান। তবে তার কোনো দলীয় পদ নেই। অনুসন্ধানে নামে নিউজ মিরর। প্রাপ্ত সূত্র এবং কাগজাদি ক্রসচেক করে মিলে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
মিজান বালুচর এলাকার মৃত আমির আলীর ছেলে। তার পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগ ঘরানার সাথে যুক্ত। পতিত সরকারের আমলে তার আত্মীয় স্বজনেরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির শীর্ষ পর্যায়ে ছিলেন। এর মধ্যে একজন সিলেট জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি, মেজরটিলা ৩৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীরের আত্মীয়। সেই সুবাদে মিজান আওয়ামী লীগ আমলে দাপট দেখিয়ে চলছিলেন। মিজানের বাবাও একসময়ে টুলটিকর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ সেক্রেটারি পদে আসীন ছিলেন। মিজানের মামা বালুচর আল ইসলাহ ৯নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ও টুলটিকর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রাজা মেম্বার। মিজান পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কোনো কিছু তোয়াক্কা না করেই এই এলাকায় কিশোরগ্যাংদের শেল্টার দিতেন। যা এখনও চলমান।
বালুচরের মোছাব্বির ভবনে ডাকাতিকালে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ক্যাপ পরিহিত মিজানের নেতৃত্বে ও তার হাতে থাকা বোমা মোছাব্বির ভবনে ছুড়ে মারছে। সেদিন তার দলবল নিয়ে মোছাব্বির ভবনে অস্ত্রসহ প্রবেশ এবং ভাঙচুর করে। এঘটনায় একটি মামলাও হয়। মামলার এজহারে বলা হয় ওই রাতে প্রায় ৮/৯ লক্ষ্য টাকার মামলায় লুট করে সে এবং তার দলবল।
একটি সূত্র জানায়, একই রাতে বালুচর এলাকার সামী ভেরাইটিজ স্টোরে হামলা করে নগদ টাকাসহ দোকানের মালামাল লুট করে নিয়ে যায় মিজান, রাজু, ও তার দলবলের লোকেরা। এছাড়াও বালুচর ২নং মসজিদ পয়েন্টের একটি পানের দোকানদারের দোকান ভাঙচুর করে ক্যাশের নগদ টাকাসহ দোকানের সিগারেটের কার্টুন লুটপাট করে তারা।
একটি সূত্র জানিয়েছে, বালুচরের মোছাব্বির ভবনটি সিলেট ৫ নং টুলটিকর ইউনিয়ন পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ্ব আব্দুল মোছাব্বির মিয়ার বাসা। ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের আমলে কাপ-পিরিছ মার্কায় নির্বাচন করে পাশ করেন। তিনি দীর্ঘদিন থেকে প্রবাসে বসবাস করছেন। এর আগে মিজান ও তার দলবল ওই প্রবাসীর কাছে ২০ লাখ টাকা চাদা দাবি করেছিলো।
বর্তমানে মিজান শাহপরান থানাধীন বালুচরের ৩৬নং ওয়ার্ডে ছাত্রদলের কর্মী পরিচয়ে ত্রাসের রাজত্ব করে বেড়াচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে শাহপরাণ (র.) থানায়।
সূত্র আরো জানায়, বিএনপি নামধারী নেতাদেরই শেল্টারে মিজান ও তার দলের রাজু, স্বপন, শাহজাহান, নাসির, নাহিদ, রুবেন, বাবলু, পাপলু, জাহেদ গংরা ৫ আগস্ট এলাকার ভিতরে বেশ কয়টি দোকান ভাংচুর করে নগদ টাকা সহ মালামাল লুট করে। ক্ষতি গ্রস্ত ব্যক্তিরা আইনের আশ্রয় নিলে, এলাকার কিছু নেতারা তাদের গ্রুপ ভারি করার জন্য মিজান সহ আওয়ামী লীগ পরিবারের অন্যান্য কর্মীদের শেল্টার দেওয়া শুরু করেন।
মিজানসহ তার দল বলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় সংবাদ প্রচার হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি! প্রশাসনের ঢিলেঢালা আচরণের কারণে মিজান এলাকায় বিভিন্ন অপকর্মের ত্রাস সৃষ্টি করছে এবং নিজেকে ছাত্রদল নেতা বলে দাবি করছে।
মোছাব্বির ভবনের ডাকাতির ঘটনায় শফু মিয়া নামক ব্যক্তি মামলা দায়ের করেন। তবে স্থানীয় কিছু নামধারী বিএনপি নেতাদের শেল্টারে আইনী ব্যবস্থা নিতে পারছে না প্রশাসন। তাইতো সে একাধিক মামলার আসামি হয়েও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে!
এলাকার স্থানীয়রা জানান, মিজান সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সেক্রেটারি হয়ে আসবে বলে এলাকায় প্রচার করছে। বিষয়টি এরকম, যখন যে দল যায় মিজান সেই দলের লোক! এরকরম গুরুত্বপূর্ন পদ পেলে সে অতীতের পেয়ে পদের অপব্যবহার করে আরো বেপরোয়া এবং এলাকার আতঙ্ক হয়ে উঠবে। স্থানীয়রা বিএনপি নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন এবং দলের সুনাম রক্ষায় এদের স্থান না দেয়ার আহবান জানিয়েছেন।
‘সিলেটে ডাকাতি’ ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
সিলেট মহানগর ছাত্রদলের একটি সূত্র জানিয়েছে, পতিত আওয়ামী লীগ পরিবারের ডেভিলদের জাতীয়তাবাদী দলে কোনো স্থান নেই। দলের নাম বিক্রি বা সুনাম নষ্টকারি কেউই পার পাবেন না। কেউ যদি এমন করেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক এবং আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে দল।
৫ আগস্টের ঘটনায় মিজান ও তার দলবলের বিরুদ্ধে শাহপরাণ (র.) থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক জাকির হোসেন আদালতে একটি ৪ পৃষ্টার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।