বিশেষ প্রতিবেদক
সিলেটে চোরাচালানের সিন্ডিকেট এখন যুবদল ও ছাত্রদলের নেতারা নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ ছিল ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাদের হাতে। আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগের পর চিনি চোরাচালানের সিন্ডিকেটের শুধু হাতবদল হয়েছে।
চোরাকারবারিদের দেয়া তথ্যমতে, ক্ষমতার পালাবদলের পর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। এ সুযোগে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ নেন যুবদল-ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। তাদের নেতৃত্বেই এখন সীমান্ত এলাকা থেকে চোরাই চিনি, কসমেটিকস, কাপড়, চকলেট, মাদক নিরাপদে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। এর বিনিময়ে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতারা মোটা অঙ্কের টাকা নিচ্ছেন। তারাই আবার প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করছেন টাকার বিনিময়ে। প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তারা লাইন ক্লিয়ারেন্স সিগনাল দিলে নগর হয়ে গন্তব্যে পৌছে যাচ্ছে চোরাচালান।
সীমান্তের একটি সূত্র জানিয়েছে, সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার চোরাচালান আসে। এসব চালান তামাবিল-জৈন্তাপুর-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক ও ভোলাগঞ্জ-কোম্পানীগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে নগরের পাইকারি বাজার কালীঘাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়।
আগে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের অনুসারীরা পাহারা দিয়ে প্রতিদিন মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত চোরাচালানের কসমেটিকস, কাপড়, চকলেট, মাদক, চিনির ট্রাক শহরে ঢোকাতেন। এখন এ কাজে হাতবদল ঘটেছে।
একাধিক চোরাকারবারির ভাষ্য, ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর কারবারিরা অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। চোরাচালানের হোতা ছাত্রলীগ নেতারাও আত্মগোপনে চলে যান। এ ছাড়া সীমান্ত এলাকায় নজরদারিও আগের চেয়ে বাড়ে। এতে পাচার অনেকটা কমে যায়। তবে আবার চিনি পাচার শুরু হয়েছে। এখন শহরে নির্বিঘ্নে চোরাই চিনির প্রবেশ ঘটাতে যুবদল ও ছাত্রদলের কিছু নেতা-কর্মী পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন।
জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর, সিলেট নগরের শাহপরান, টিলাগড়, শিবগঞ্জ, আম্বরখানা এবং দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বাইপাস এলাকায় চোরাচালানের গাড়ি গন্তব্যে পৌছতে মোটরসাইকেল কার, জিপ, নোহা, হাইয়েস যোগে তারাই পাহাড়া দিয়ে পাঠাচ্ছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, হার্ডলাইনে প্রশাসন। চোরাচালান জব্দে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না। যাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ আসছে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিচ্ছে।
সূত্রটি আরো জানায়, চলতি মাসে চোরাচালানে সম্পৃক্তের ঘটনায় এক কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এবং জিজ্ঞাসাবাদে তার দেয়া তথ্যে যুবদল ও ছাত্রদলের কিছু নেতা কর্মীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়াও প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে প্রশাসনের যাদের নাম এসেছে তাদেরও নজর দারিতে রাখা হয়েছে।
সিলেট বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জানান, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কড়া নির্দেশনা রয়েছে। বিএনপি কিংবা অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে যে বা যারা অপকর্ম অথবা অপরাধ করবে, তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। যুবদল কিংবা ছাত্রদলের কারও বিরুদ্ধে চোরাচালানে জড়িত থাকার সম্পৃক্ততা পেলে দলীয়ভাবে তার ব্যবস্থা নেয়া হবে।