শনিবার, ০৭ Jun ২০২৫, ১০:২৩ পূর্বাহ্ন

নোটিশ
সাইটের সংস্কার কাজ চলছে, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের পাশে থাকার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।
গ্রেফতার আতঙ্কে হরিপুরের চোরাকারবারিরা, চলছে বৈঠক!

গ্রেফতার আতঙ্কে হরিপুরের চোরাকারবারিরা, চলছে বৈঠক!

বিশেষ প্রতিবেদক
চোরাচালানের সিন্ডিকেটদের নিরাপদ আস্তানা ছিলো জৈন্তার উপজেলার হরিপুর এলাকা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে এই উপজেলা এবং সড়কের নিয়ন্ত্রণ ছিল, সিলেট আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগসহ তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাদের হাতে। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর এই চোরাচালানের সিন্ডিকেটের হাতবদল হয়েছে। তবে চোরাচালান আসা অব্যহত রয়েছে। ক্ষমতার পালাবদলের পর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগসহ তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান।

অভিযোগ উঠে, এই সুযোগে সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ নেন সিলেট যুবদল-ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। তাদের নেতৃত্বেই এখন সীমান্ত এলাকা থেকে চোরাই চিনি, কসমেটিকস, কাপড়, চকলেট, মাদক নিরাপদে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। এর বিনিময়ে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতারা মোটা অঙ্কের টাকা নিচ্ছেন। তারাই আবার প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করছেন টাকার বিনিময়ে। প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তারা লাইন ক্লিয়ারেন্স সিগনাল দিলে নগর হয়ে গন্তব্যে পৌছে যাচ্ছে চোরাচালান।

এসব অভিযোগে বিতর্কিত হচ্ছেন সিলেট বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। কিছুতেই বদনাম তাদের পিছু ছাড়ছে না! বুধবার সেনাবাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা করায় চোরাকারবারিরা পড়েছেন বিপাকে। সেনাবাহিনীর অভিযানে পুরো চোরাচালানের লাইন এখন বন্ধ রয়েছে। চালান আটক, গ্রেফতার আতঙ্কসহ নানান সমস্যায় পড়েছেন চোরাকারবারিসহ তাদের গডফাদাররা।

সেনাবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান শুরুর পর বৃহস্পতিবার হরিপুরের চোরাকারবারিরা নিজেদের বাঁচাতে এবার দারস্থ হচ্ছেন বিএনপি নেতাদের কাছে। চলছে বৈঠক! তবে বিএনপি নেতারা কেউই আওয়ামী লীগের মতো এসব বিতর্কিত কাজে তাদের সহযোগীতার হাত বাড়াচ্ছেন না। কারণ প্রশাসনে বিপক্ষে বা সমঝোতায় গেলে নিজেরাই বিতর্কিত হবেন। চোরাকারবারিরা নিজেদের দাপট দেখাতে গিয়ে তারা এখন নিজেরাই বিপাকে পড়েছেন। কোথাও গিয়েও কোনো ধরনের ঠাই হচ্ছে না তাদের। অনেক চোরাকারবারিরা সেনাবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের ভয়ে সিলেট নগরের বিভিন্ন হোটেল-মোটেল এবং আত্মীয়স্বজনদের বাসায় অবস্থান করছেন। এ ঘটনার পর থেকে পুরো হরিপুর বাজার নীরব হয়ে পড়েছে।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার পর থেকে চোরাকারবারিরা উপজেলার মুরুব্বিদের মাধ্যমে সিলেটের কয়েকজন বিএনপির নেতাদের সাথে যোগাযোগ এবং বৈঠক করেছেন। এমনিতেই চোরাচালান নিয়ে বিতর্কিত সিলেট বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাই প্রশাসনে বিপক্ষে বা সমঝোতার আলোচনায় গেলে নিজেরাই বিতর্কিত হবেন ভেবে কেউই এসব বিষয় নিয়ে সাঁড়া দিচ্ছেন না। তাই এসব বিষয়ে কেউই নিজেদের নাম জড়াতে চাচ্ছেন না।

বিষয়টি নিয়ে সেই সব নেতাদের কল করলে, তারা কেউই এই বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

জৈন্তাপুর উপজেলার আলেম-উলামা শাসিত একটি অঞ্চল হচ্ছে হরিপুর। সেটি পূর্ব সিলেটের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্রও। গত দুই যুগ ধরে আলেম উলামা শাসিত হরিপুর নতুন নামে পরিচিতি পেয়েছে চোরাই সিন্ডিকেটের হেডকোয়ার্টার।

সূত্র জানায়, একসময়ে হরিপুরে চোরাই গরু মহিষের হাট বসতো। এখনো সেটি বসে। তবে চোরাই পশুর হাটের নাম ছাপিয়ে এখন চোরাই চিনির রাজ্যে পরিণত হয়েছে এ বাজার। সীমান্ত দিয়ে সব ধরনের পণ্য আসে হরিপুরে। ওখান থেকে গাড়িযোগে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এই এলাকার কয়েকটি গ্রামের লোকজন ঘরে ঘরে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। নিজেরাই তৈরী করেছেন ভারতীয় চিনি, কসমেটিকসসহ অন্যান্য পন্যের গোডাউন।

এদিকে ঘটনার পরে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পুলিশও হরিপুর বাজারের নিকটবর্তী হরিপুর, চানপুর, হেমু, হাউদপাড়া, বালিপাড়া সহ কয়েকটি গ্রামে ঘরে ঘরে তল্লাশি চালিয়েছে। তারা চোরাচালানের গডফাদার আব্দুর রশিদ চেয়ারম্যানের বাড়িতেও হানা দেয়। এ সময় তারা ঘর তল্লাশি করলেও রশিদ চেয়ারম্যানের খোঁজ পায়নি।

চোরাচালান নির্মূল করতে সেনাবাহিনীর চেকপোস্টকে স্বাগত জানিয়েছে আশপাশ উপজেলার বাসিন্দারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চোরাকারবারিদের বিপক্ষে ঝড় তুলছেন নেটিজেনরা। দেশের সর্বোচ্চ সংস্থা সেনাবাহিনীর ওপর হামলা, সাধারণ জনতাসহ কেউই মেনে নিতে পারছেন না। এদিকে সেনাবাহিনীর তরফ থেকে এ বিষয়ে কোনো ব্রিফ করা হয়নি।

হরিপুরের স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রকৃত দোষীরা গ্রেফতার হোক তারা চান। তারা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি করেছেন- সামনে ঈদ, নিরীহ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখার।

বিজিবিতে কর্মরত এক সেনা কর্মকর্তা জানিয়েছেন- হরিপুরের চোরাকারবারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। টহলে থাকা সেনাবাহিনীর গাড়িকে চাপা দিয়ে এ ঘটনার সূত্রপাত ঘটানো হয়েছে। এরপর সেনাসদস্যদের উপর হামলা করা হয়েছে। এমন ঘটনা কোনো আইনই গ্রহণ করে না। ফলে চোরাকারবারিদের রুখতে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রাখা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে দাবি করেন তিনি।

শেয়ার দিয়ে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন, ধন্যবাদ।




© All rights reserved © 2012 Newsmirror24.news
Design BY Web Home BD
ThemesBazar-Jowfhowo