শনিবার, ০৭ Jun ২০২৫, ০২:৫৮ অপরাহ্ন

নোটিশ
সাইটের সংস্কার কাজ চলছে, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের পাশে থাকার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।
ধর্ষণকাণ্ড : সামনে এলো মিসবাহ সিরাজের অপহরণের চাঞ্চল্যকর তথ্য

ধর্ষণকাণ্ড : সামনে এলো মিসবাহ সিরাজের অপহরণের চাঞ্চল্যকর তথ্য

https://newsmirror24.news/

বিশেষ প্রতিবেদক
১৩ই ডিসেম্বর রাতে সিলেটে আওয়ামী লীগ নেতা মিসবাহ সিরাজকে অপহরণ করে নিয়ে রাখা হয়েছিল নগরীর সাগরদিঘীর পাড়ের ড্রিমসিটি আবাসিক এলাকার একটি রুমে। যেটিকে টর্চার রুম হিসেবে চিনেন সবাই। টিনশেডের দুই রুমের বাসার এক রুমে পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন বিশ্বনাথের রহমান নগরের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন। ঘটনার পাশের ঘর থেকে ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন। একইসঙ্গে যে কক্ষে নিয়ে মিসবাহ সিরাজকে নিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছিলো সেই কক্ষে ছিল সিসিটিভি ক্যামেরা। ঘটনার পর দেলোয়ার হোসেন আগ্রহবশত সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে রেখেছিলেন। পরে যখন তার উপর হুমকি আসতে থাকে তখন তিনি স্ত্রী, সন্তানকে বাসায় রেখে বিশ্বনাথের বাড়িতে চলে যান। তবে তার কাছে সিসিটিভি’র ফুটেজ রয়েই গেছে।

এই অবস্থায় সিসিটিভি’র ফুটেজ নিয়ে আসতে বার বার তাগাদা দিচ্ছিলো অপহরণ চক্রের অন্যতম হোতা বিশ্বনাথে সরুয়ালা গ্রামের রাজু ও তার বন্ধু মাহফুজ। তাদের নিয়ন্ত্রণেই চলতো ড্রিমসিটি’র সব অবৈধ কার্যকলাপ। কিন্তু সিসিটিভি’র ফুটেজ গায়েব রাখতে অবশেষে তারা দু’জন মিলে দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রীকে ধর্ষণ করে। আর ওই ধর্ষণের ভিডিও তারা ধারণ করে রাখে। এরপর এই ভিডিও নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখে সিসিটিভি’র ফুটেজ চায় ধর্ষকরা। এ নিয়ে মিলে অপহরণের চাঞ্চল্যকর তথ্য। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না তাদের। দেলোয়ারের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিলেটের কোতোয়ালি থানা পুলিশ গিয়ে দুই ধর্ষককে গ্রেফতার করেছে। এরপর ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা মিসবাহ সিরাজকে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনাটিও প্রকাশ পেয়েছে।

দেলোয়ার হোসেন ঘটনার বিবরণ দিয়ে জানিয়েছেন- গ্রেফতার হওয়া রাজু ও মাহফুজসহ আরও কয়েকজনের নেতৃত্বে ১৩ই ডিসেম্বর রাতে আওয়ামী লীগ নেতা মিসবাহ সিরাজকে অপহরণ করার পর ড্রিমসিটির ওই টিনশেডের বাসায় নিয়ে আসে। সেখানে তারা মিসবাহ সিরাজকে রাখে। পাশের ঘরে ছিলেন দেলোয়ার ও স্ত্রী। ফলে ওই রাতে তিনি মিসবাহ সিরাজের কথা বার্তা শুনেছেন। ঘরের ভেতরেই মিসবাহকে নির্যাতন করা হয়েছে কি না সে ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত ছিলেন না। গভীর রাতে তারা মিসবাহকে বাইরে নিয়ে যায়। পরে অবশ্য তিনি মিডিয়ার মারফতে ঘটনাটি জানেন।

এরপরই তিনি কৌতূহলবশত যে ঘরে মিসবাহ সিরাজকে রাখা হয়েছিলো সেই ঘরের সিসিটিভি’র ফুটেজ নিজেই সংগ্রহ করে রাখেন। বিষয়টি জেনে ফেলে অপহরণ চক্রের অন্যতম দুই সদস্য রাজু ও মাহফুজ। ঘটনার পর অবশ্য তারা সিসিটিভি’র ফুটেজ মুছে ফেলে।

দেলোয়ার জানান- তার কাছে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ ফেরত দিতে রাজুসহ কয়েকজন চাপ প্রয়োগ করে। এতে তিনি রাজি হননি। পরে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিলে তিনি স্ত্রী ও সন্তানকে ড্রিমসিটির ভাড়া বাসায় রেখেই বাড়িতে চলে যান। তাকে না পেয়ে রাজু ও মাহফুজ তার স্ত্রী ও সন্তানকে আটকে ফেলে। প্রায় ১৫ দিন পর ওখান থেকে মুক্ত হয়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বিশ্বনাথে যান।

বিশ্বনাথে ফিরে স্ত্রী স্বামী দেলোয়ারকে জানায়- তাকে ঘরে আটকে রেখে মাহফুজ ধর্ষণ করেছে। আর ওই ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করেছে রাজু। রাজুর কাছে এখন ভিডিও আছে। বিষয়টি শোনার পর দেলোয়ার অপহরণ চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানায়- সিসিটিভি’র ফুটেজ ফিরিয়ে দিলে ধর্ষণের ভিডিও ফেরত দেবে।

দেলোয়ার নিজেকে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার দাবি করে বলেন; কয়েকদিন আগে ড্রিমসিটির বাসায় তার নামে ঢাকা থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি পার্সেল আসে। ওই পার্সেলের খোঁজে তিনি সোমবার দুপুরে তার স্ত্রী ও সন্তানকে সিলেটের বাসায় পাঠালে রাজু ও মাহফুজ তাদের আটকে ফেলে। একইসঙ্গে মোবাইল ফোনেও তাকে হুমকি দেয়।

সিসিটিভি’র ফুটেজ না দিলে তার স্ত্রী ও সন্তানকে খুন করা হবে বলে হুমকি দেয়। এতে সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন দেলোয়ার। বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও রাত পর্যন্ত তার স্ত্রী ও সন্তানকে ছেড়ে দেয়নি ওরা। একপর্যায়ে রাতে তিনি ৯৯৯-এ ফোন করে বিষয়টি জানান।

তথ্য পেয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশ গিয়ে রাজু, মাহফুজকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। একইসঙ্গে তার স্ত্রী ও সন্তানকে উদ্ধার করে থানায় আনে।

এদিকে- থানায় নিয়ে আসার পর দেলোয়ারের স্ত্রী পুলিশের কাছে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণের ঘটনাটি জানায়। পুলিশ উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতাও পায়।

সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি জিয়াউল হক জানিয়েছেন- ওই গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে আটক করা রাজু ও মাহফুজকে আসামি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে থানায় ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণের মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। আর নির্যাতিতা গৃহবধূকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি মিডিয়া মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন- দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরবর্তীতে তদন্তে ঘটনা বিস্তারিত জানা যাবে। নির্যাতিতার স্বামীর দাবি; মিসবাহ সিরাজকে নিয়ে ড্রিমসিটির ওই টর্চারসেলে নিয়ে রাখা হয়েছিলো। ওখানে জোরপূর্বক জমি দখল করে ঘর নির্মাণ করে টর্চার সেল বানানো হয়। আর সব অপকর্ম ওই ঘরে করা হয়। সোমবার রাতে রাজু ও মাহফুজকে আটকের সময় তাদের সিন্ডিকেটের অন্য সদস্য বাসিত, দিলীপ, রুকনসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিল। তারা পরে থানায় এসেছিলো। তবে পুলিশ তাদের আটক করেনি। তারা ড্রিমসিটির ওই ঘরে নানা অপকর্ম করে বেড়ায়। মিসবাহ সিরাজকে নিয়ে রাখার ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ তার কাছে রয়েছে বলে জানান।

সেদিন কী ঘটেছিলো মিসবাহ সিরাজের ওপর: সাত মামলায় পলাতক ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ সিরাজ। ১৩ই ডিসেম্বর রাতে রাজ, মাহফুজসহ কয়েকজন তাকে নগরের ফাজিলচিস্ত এলাকার বাসার সামনের রাস্তা থেকে অপহরণ করে সাগরদিঘীরপাড়ের ওই বাসায় নিয়ে যায়। ওখানে আটকে রেখে তাকে নির্যাতন করা হয়। উদ্ধারের পর মিসবাহ সিরাজের পা ও হাত ক্ষতবিক্ষত ছিল। তাকে উপর্যুপরি কোপানো হয়। পরে পরিবারের সদস্যা ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। সাগরদিঘীরপাড়ের শ্মশান ঘাটের পাশে সড়ক থেকে মিসবাহকে রাতে ৩টার পর উদ্ধার করা হয় বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। তবে মিসবাহ সিরাজের পরিবার ঘটনায় থানায় কোনো মামলা করেনি।

সূত্র : ওয়েছ খছরু, মানবজমিন

শেয়ার দিয়ে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন, ধন্যবাদ।




© All rights reserved © 2012 Newsmirror24.news
Design BY Web Home BD
ThemesBazar-Jowfhowo