বিশেষ প্রতিবেদক
সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার উপর হামলার ঘটনার ৬টি মামলার অন্যতম আসামি সিলেট মহানগর শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক, সিলেট জেলা সিএনজি চালিত অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের (চট্ট-৭০৭) সভাপতি আলোচিত জাকারিয়া আহমদ। গত মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) তাকে গ্রেফতারের মাত্র ১২ ঘন্টার ব্যবধানে তার জামিন হয়। এ্যাডভোকেট মো. সাজ্জাদুর রহমানের ওকালতনামায় তিনি জামিন পান।
ডেভিল জাকারিয়ার অনুসারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলাসহ সব মামলায় জামিন নিয়েছেন বলে প্রচারনা করে। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যম, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ৬টি মামলায় জামিনের কথা উল্লেখ করে প্রচার করে। মূলত ওই দিন একটি মামলা থেকে জামিন পান জাকারিয়া। জিআর মামলা নং- ৪৯০। আর তার বাকি ৫টি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়নি! এই প্রচারণার কারন হচ্ছে প্রশাসনের চোখে নিজেকে আড়াল করে রাখার।
জাকারিয়ার জামিনে তাকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করেন শ্রমিকদল নেতা মো. আলী আকবর রাজন। জামিনকালে আদালতে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জাতীয়তাবাদী আইনজীবিদের আরো ক’জন সিনিয়র এ্যাডভোকেট। ওই সময়ে তারা আদালতে নীরব ভূমিকা পালন করেন।
এছাড়াও কোর্ট প্রাঙ্গনে প্রকাশ্যে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ডেভিল জাকারিয়ার পক্ষে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সিলেট জেলার যুগ্ম আহবায়ক, সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক মো. আলী আকবর রাজন সাফাই গেয়ে সিলেট বিএনপিকে বিতর্কৃত করার অভিযোগে ( ৩ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ) শোকজ করা হয়। ৩ দিন পার হয়ে আজ ৫দিন। এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তারা! শুধু সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সিলেট জেলা শ্রমিকদলে ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক শাহ আব্দুল মুকিত ও সদস্য সচিব নুরুল ইসলাম নিজেদেরকে দায়িত্বশীল প্রমান করেন!
এই জামিনের মূল কারিগর আলী আকবর রাজন। তার পরিকল্পনায় এই জামিন হয়। গত মঙ্গলবার সকালে জাকারিয়াকে থানা থেকে আদালতে প্রেরণ করা হলে সেখানে জড়ো হন আলী আকবর রাজনসহ ডেভিল জাকারিয়ার অনুসারীরা। সাথে ছিলেন পরিবহন শ্রমিক নেতারাও। তারা আদালত প্রাঙ্গনে এসে জাকারিয়ার মুক্তির দাবী করেন। সেই পুরনো হুমকি আবার শুরু করেন শ্রমিকরা। সিলেট নগরজুড়ে তারা গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে ডেভিল জাকারিয়ার মুক্তির জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এসময় জাকারিয়ার মুক্তির জন্য প্রকাশ্যে বক্তব্য দেন আলী আকবর রাজন। এসময় আদালত প্রাঙ্গনে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
গত সোমবার (২৮ এপ্রিল) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মো. জাকারিয়া আহমদকে মদিনা মার্কেটস্থ তার নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে আদালতে তোলা হলে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। শ্রমিকলীগ নেতা জাকারিয়া নানা কারণে সিলেটে ছিলেন আলোচিত।
জাকারিয়ার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ, সিলেটের পরিবহন সেক্টরে রয়েছে শ্রমিক নেতা জাকারিয়ার একক আধিপত্য। আওয়ামী লীগ সরকারে আমলে বিএনপি-জামায়াত হরতাল দিলে সড়কে গাড়ি সচল রাখার দায়িত্ব ছিল তার। আবার বিএনপি জামায়াত কর্মসূচি দিলে নানা ইস্যু সৃষ্টি করে কর্মবিরতির নামে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দিতেন তিনি। এনিয়ে সাধারণ যাত্রীরাও ছিলেন জাকারিয়ার উপর ক্ষুব্ধ। জাকারিয়া আহমদ কারান্তরীণ ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবেও সিলেটে ছিলো ব্যাপক পরিচিতি।
অভিযোগ রায়েছে আওয়ামী লীগের সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীর উপরও হামলা করিয়েছিলেন এই জাকারিয়া আহমদ। সিলেটের পলাতক আওয়ামী লীগ নেতারা যখন খুশি তখন এই জাকারিয়াকে দিয়ে শ্রমিক আন্দোলনের নামে সিলেটকে উত্তপ্ত করতেন। তার এই কর্মকান্ডে সিলেটবাসী নানা ভোগান্তিতে পড়তেন। মঙ্গলবারও ডেভিল জাকারিয়া আহমদের পক্ষ নিয়ে আন্দোলনের ডাক দেয় শ্রমিকরা। পরে তাদের নিবৃত করার নাটক মঞ্চস্হ করে আলী আকবর রাজন ও আওয়ামী লীগ নেতা মঈনুল ইসলাম। ৫ আগস্টের পর এটাই তাদের ছিলো অঘোষিত প্রথম অবরোধ। তারা আবারও ফ্যাসিবাদীদের হয়ে সিলেটকে তাদের আয়ত্বে নেয়ার চেষ্টা করছে। যা বিগত ১৬ বছর করে আসছিল।
একটি মামলা থেকে জামিন পেয়েছে বলে জানান আলোচিত জাকারিয়া আহমদ। তিনি আরো জানান, ওইদিন তিনি ফেসবুক লাইভে এসেও বলেছেন একটি মামলা থেকে জামিন পেয়েছেন। কিছু মানুষ উস্কানি দিয়ে সব মামলায় জামিন হয়েছে বলে প্রচার করেছে।