নিজস্ব প্রতিবেদক
সিলেট নগরীর পাঠানটুলা এলাকায় এক প্রতিবন্ধী কিশোর রিফাতকে হাত-পা প্লাস্টিক বেল্ট দিয়ে বেঁধে শারীরিক নির্যাতনের ঘটনায় নিজের দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন অভিযুক্ত আরিফ হোসেন ও তার পরিবার। ২২ জুন রোববার রাতে প্রতিবন্ধী কিশোর রিফাতকে নির্যাতনের ভিডিও এবং এ ঘটনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউজ মিরর। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এতে টনক নড়ে স্থানীয়দের।
এ ঘটনায় ২৩ জুন সোমবার সকালে নগরীর পাঠানটুলা এলাকায় রাগিব রাবেয়া মেডিকেল হাসপাতালের গলির মুখের মার্কেটে স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে একটি সালিশি বৈঠক হয়। বৈঠকে নির্যাতনের শিকার প্রতিবন্ধী কিশোর রিফাত ও নির্যাতনকারি আরিফ হোসেনের পরিবারের সদস্যসহ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
সালিশি বৈঠকে আরিফ হোসেন নিজের দোষ স্বীকার করে প্রতিবন্ধী কিশোর রিফাতসহ উপস্থিত সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। এছাড়াও ভবিষ্যতে এরকম হবে না বলে অঙ্গিকার করেছেন।
সালিশি বৈঠকে সবার সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্তে, প্রতিবন্ধী কিশোর রিফাতের সবধরনের ক্ষতি পুরন দেন আরিফ হোসেনের পরিবার। এবং অদূর ভবিষ্যতে প্রতিবন্ধী কিশোর রিফাত ও তার পরিবারের আর্থিক সহযোগীতা করবেন বলেও অঙ্গিকার করেন।
এছাড়াও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এই প্রতিবন্ধী কিশোর রিফাতকে স্নেহ করেন বলে জানিয়েছেন। তারা তাদের নিজেদের উদ্যোগে প্রতিবন্ধী রিফাতের যে কোনো সমস্যায় সহযোগীতা করবেন বলে রিফাতে পরিবারকে আশ্বস্ত করেন।
সালিশি বৈঠকে নির্যাতনের শিকার প্রতিবন্ধী কিশোর রিফাতের পক্ষে আসেন রিফাতের পিতা রবিউল। তিনি ন্যায় বিচার পেয়েছেন বলে জানান। তিনি স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ও ব্যবসায়ীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ঘটনাটি জানতেন না আরিফ হোসেনের পিতা ব্যবসায়ী মো. রবুর হোসেন। তিনি বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে রাতেই প্রতিবন্ধী কিশোর রিফাতের বাসায় গিয়ে তার খোঁজখবর নেন। বাসায় এসে নিজের ছেলেকে শাসন করেন। ছেলের এই ঘটনায় তিনি দু:খ প্রকাশ করেন। তিনি প্রতিবন্ধী কিশোর রিফাতের সবধরনের ক্ষতি পুরন দেন। এবং অদূর ভবিষ্যতে প্রতিবন্ধী কিশোর রিফাত ও তার পরিবারের আর্থিক সহযোগীতা করবেন বলে অঙ্গিকার করেন।
এদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ব্যবসায়ী মো. রবুর হোসেন বলেন, আমি একজন সাধারণ ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন থেকে এই এলাকায় ব্যবসা করে আসছি। পলাতক ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি জগদীশ দাসের অনেক নির্যাতনের শিকার এই এলাকার ব্যবসায়ীরা। অনেক সময়ে বাধ্য হয়ে তার সাথে আমাদের ছবি তুলতে হয়েছে।
নগরীর পাঠানটুলা এলাকায় রাগিব রাবেয়া মেডিকেল হাসপাতাল মার্কেট কমিটির সভাপতি গোলাম কিবরিয়া জানান, বিষয়টি দু:খজনক। আরিফ হোসেন ও প্রতিবন্ধী রিফাত এই এলাকারই ছেলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি দেখার পর আমরা এলাকার ব্যক্তিবর্গ ও ব্যসায়ীরা মিলে বিষয়টি মিমাংসা করার উদ্যোগ নেই। দুটি পরিবারের সহযোগীতায় সামাজিকভাবে বিষয়টি সুন্দরভাবে মিমাংসা হয়েছে। প্রতিবন্ধী রিফাতের জন্য কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা সবাই রিফাতের সহযোগীতা করবো। ইনশাআল্লাহ।
সালিশি বৈঠকে এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নগরীর পাঠানটুলা এলাকায় রাগিব রাবেয়া মেডিকেল হাসপাতাল মার্কেট কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার খান, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক তানিম আহমদ মুন্না, ব্যবসায়ী আব্দুস ছাত্তার মিয়া, বিশ্বজিৎ দাস, সুজন দেব, জাহাঙ্গীর আহমদ, সমিরন বাবু, পুলক দাস’সহ ব্যবসায়ী ও স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ প্রমুখ।