রবিবার, ২৯ Jun ২০২৫, ০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন

নোটিশ
সাইটের সংস্কার কাজ চলছে, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের পাশে থাকার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।
সিলেটে ৩০ কোটি টাকার সম্পত্তি দখলের অভিযোগ যুবদল নেতার বিরুদ্ধে!

সিলেটে ৩০ কোটি টাকার সম্পত্তি দখলের অভিযোগ যুবদল নেতার বিরুদ্ধে!

ইনসেটে- সিলেট মহানগর যুবদলের সহ সভাপতি বেলাল আহমদ।

বিশেষ প্রতিবেদক
সিলেট নগরীর কদমতলী পয়েন্টে ‘আওয়ামী দোসর’ ট্যাগ দিয়ে প্রায় ৩০ কোটি টাকার মৌরসি সম্পত্তি জবর দখলের অভিযোগ উঠেছে সিলেট মহানগর যুবদলের সহ সভাপতি বেলাল আহমদের বিরুদ্ধে। ৫ আগস্টের পর পট পরিবর্তনের সুযোগে গত ২৮ মার্চ তিনি ওই এলাকার একটি মার্কেটসহ প্রতিবেশীর ৮৪ শতক জায়গা দখল করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন সম্পত্তির মালিক পক্ষ। এছাড়াও তিনি জায়গার প্রকৃত মালিককে রাজনৈতিক ঘায়েল করতে এক সময়ের ২৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান সিলেট মহানগর ২৬ নাম্বার ওয়ার্ড বিএনপির নির্বাহী সদস্য তাজুল ইসলাম টিপুকে বানিয়েছেন ‘আওয়ামী লীগের দোসর’! ঘটনাটি নিয়ে সিলেট জুড়ে তোলপাড় চলছে।

সিলেট নগরীর কদমতলী পয়েন্ট সংলগ্ন ৩ দাগে একটি মার্কেটসহ ৮৪ শতক ভূমি যার বাজার মূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা। গত ২৪ জুন মঙ্গলবার নগরীর কদমতলী পয়েন্টের জায়গা দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা পর বিষয়টি আলোচনায় আসে।

দুই পক্ষের সংঘর্ষের পুলিশ, বিএনপি ও যুবদল নেতাসহ ৬ জন আহত হন। আহতরা হলেন, সিলেট সিটি এসবির এএসআই মালেক, পশ্চিম শেখঘাটের ৭৫ নবাব রোডের মৃত আব্দুল গাফফারের ছেলে সিলেট মহানগর যুবদলের সহ সভাপতি বেলাল আহমদ, ৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি লখন আহমেদ, কদমতলীর আফরোজ বক্সের ছেলে তাজুল ইসলাম টিপু, গুল্লু মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আব্দুল ও তার ছেলে লিপন আহমদ।

এদিকে স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, কদমতলী পয়েন্ট সংলগ্ন এই ভূমির রেকডীয় ও ক্রয়সূত্রে মালিক মৃত জহির বক্স ও উনার জামাতা মৃত মাহমুদ হাজী। ওই ভূমিতে টিপু বক্স তার পিতা আফরোজ বক্স এর নামে ‘আফরোজ ম্যানশন’ মার্কেট তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে পরিচালনা করে আসছেন। ওই মার্কেটে আছে ২৬টি দোকান। সব মিলিয়ে যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা।

অপরদিকে, মৃত মাহমুদ হাজীর উত্তরাধিকারী হিসেবে ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের সুযোগে গত ২৮ মার্চ জায়গাটি জবরদখল করেন সিলেট মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি বেলাল আহমদ। ওই ভূমি দখল করে ‘আফরোজ ম্যানশন’ এর সাইনবোর্ড সরিয়ে সেখানে মাহমুদ কমপ্লেক্স-২ নামীয় সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন। তারা পরস্পর আত্মীয়, টিপু বক্স ও বেলাল আহমদ সম্পর্কে মামা-ভাগ্নে।

জায়গার মালিক সিলেট মহানগরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নির্বাহী সদস্য তাজুল ইসলাম টিপু বক্স জানান, তার দাদার আমলের এই সম্পত্তি হলেও মায়ের পক্ষের মৌরসি জায়গা বলে সিলেট মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি বেলাল আহমদ তাদের ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর সাজিয়ে (‘আওয়ামী দোসর’ ট্যাগ দিয়ে) গত ২৮ মার্চ জায়গাটি জবরদখল করেন।

যুবদল নেতা বেলাল আহমদ তাকে বলছেন আওয়ামী লীগের দোসর অথচ তিনি নিজেও বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি একসময় ছিলেন ২৭ নাম্বার ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান সিলেট মহানগরীর ২৬ নাম্বার ওয়ার্ড বিএনপির নির্বাহী সদস্য।

সিলেট মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি বেলাল আহমদের দাবি, জায়গাটি তাদের নানাবাড়ি থেকে পাওয়া। বতর্মানে তার মা ও মামাদের নামে দলিলও আছে। ‘ফ্যাসিস্ট দোসর’ টিপু বক্সরাই তাদের জায়গা দখল করে রেখেছিলেন! আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে তারা সেটি বুঝিয়ে দিয়েছেন। পরে আবার সেই জায়গা দখলে নিতে তারাই আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। এ হামলায় তিনি এখনও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি মিজানুর রহমান সম্পত্তি নিয়ে হামলা-মামলার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি এখন আদালতে। টিপু বক্সের মা কয়েক দিন আগে একটি অভিযোগ দিয়েছেন কিন্তু আদালতে মামলা চলমান থাকায় সেখানে আমাদের কিছু করার ছিলো না। তবে গত ২৪ জুন মঙ্গলবারের ঘটনায় ১৫ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৬০-৭০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেছেন দক্ষিণ সুরমার নবাব রোড এলাকার বাসিন্দা আবদুল হক। মামলার একজন আসামি সুলতান আহমদকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

অভিযোগকারী টিপু বক্স বলেন, নিজের দলীয় পদ-পদবি ও প্রভাব বিস্তার করে সিলেট মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি বেলাল আহমদ দলবল নিয়ে এই জায়গা দখল করেন। তার পেশি শক্তির কারণে আমরা নিজেদের সম্পত্তিতে যেতে পারি না। নানা জায়গায় অভিযোগ দিয়েও সুবিচার পাইনি। উল্টো আমাদের ওপর হামলা-মামলা করা হয়েছে। সিলেট মহানগর ২৬ নাম্বার ওয়ার্ড বিএনপির নির্বাহী সদস্য থাকা অবস্থায় আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর বানানোর চেষ্টা করছে ওরা।

তিনি বলেন, মৌরসি সূত্রে পাওয়া এই সম্পত্তির মালিক তারা। তার দাদা জায়গার প্রকৃত মালিক আব্দুর রহিমের কাছ থেকে ১৯৫৩ সালে এই জমি কিনে ছিলেন। সেই থেকে তারাই এই জায়গার মালিক। তিনি বলেন, আমরা ২ বোন, ১ ভাই। ১৯৯০ সালে পিতার মৃত্যুর পর থেকে গত ৩৫ বছর ধরে সম্পত্তি দেখাশোনা করছেন তিনি নিজেই। সেখানে ২০০০ সালের একটি মার্কেট নির্মাণ করেন তিনি। পিতা আফরোজ বক্সের নামে এর নামকরণ করা হয় ‘আফরোজ ম্যানশন’। মার্কেটে প্রতি মাসে তিনি দোকানদারদের কাছ থেকে ভাড়া উঠান ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা করে। বিদ্যুৎ বিল দেন তিনি, খাজনাও পরিশোধ করেন নিজের নামে। কিছুদিন পর জাল দলিল নিয়ে এসে মার্কেট এবং তার আশপাশের বিশাল জায়গার মালিকানা দাবি করেন বেলাল এবং তার নিকটাত্মীয়রা।

বিচার-সালিশ এবং মামলাও করেন আদালতে। ২০১৪ সালে বেলালের নিকটাত্মীয় আব্দুল হামিন, মান্নানসহ কয়েকজন মিলে জায়গা থেকে আমাদের উচ্ছেদ চেয়ে মামলা করেন আদালতে। ২০২৩ সালে সিএমএম প্রথম আদালতে আরেকটি মামলা করেন তারা। যে মামলা এখনো বিচারাধীন। ৫ আগস্টের পর সিলেট মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি বেলাল দলীয় পরিচয়ে আমাদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিতে শুরু করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা আমাকে ধরিয়ে নেওয়া হয়। জোর করে জায়গা তাদের বুঝিয়ে দিতে বলা হয়। আমি তা না করায় তারা ২৮ মার্চ বিকেলে এসে আমার জায়গা জোর করে দখল করেন। সেই থেকে তারা মার্কেটের ভাড়াও তুলছেন। এ নিয়ে আমার মা সুনারা বেগম আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো কাজ হয়নি। দলীয় পরিচয় ও পেশি শক্তির কাছে আমরা আজ পরাজিত।

গত ২৪ জুন মঙ্গলবার আমরা মার্কেটে গেলে খবর পেয়ে বেলাল ও তাদের লোকজন এসে আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা ভিকটিম হলেও তার ভাই আমাদের ওপরই মামলা দায়ের করেন। তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে আমরা মামলা করতে পারছি না। তবে স্থানীয় এলাকাবাসিরা আমাদের সহযোগীতা করেছেন। তারা সন্ত্রাসী বাহিনীদের প্রতিহত করেছেন।

টিপু জানান, ২৭ মার্চ যুবদলের বেলালের উপস্থিতিতেই বাড়ি থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ২৮ মার্চ যখন বিকেলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তার এই সুযোগে বেলাল দলবল নিয়ে মার্কেট দখল করে নিয়েছেন। গত তিন মাস ধরে দখলে রেখেছেন আমাদের সম্পত্তি। দলীয় ফোরামসহ অনেক জায়গায় আমরা নালিশ দিয়েছি। কোথাও সুবিচার পাইনি। তারা মামলাধীন অবস্থায় দখল করায় আমরা বিষয়টি আদালতকে জানালে, প্রশাসন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যেমন ছিল, তেমন থাকতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু সেই নির্দেশও মানেননি সিলেট মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি বেলাল আহমদ। নিজের প্রভাব খাটিয়ে গেল ২৪ জুন আবারও আমাদের ওপর হামলা করেন। তাড়িয়ে দেন আমাদের স্থাপনা থেকে।

তিনি জানান, বর্তমানে জমির পর্চা আমার নামে। পাশের ১৬ ডিসিমেলের একটি জায়গা তাদের দাবি করে আদালতে মামলা করলেও আমার পক্ষেই রায় আসে। বাকি সম্পত্তির দাবি নিয়ে তারা আদালতে গিয়েছেন। মামলা নিষ্পত্তির আগেই তারা সেই জায়গা আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন সিলেট মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি বেলাল আহমদ। হাসপাতাল থেকে তিনি বলেন, ৮৪ ডিসিমেল জায়গার মধ্যে ৫০ ডিসিমেল তাদের কেনা। যার দলিল রয়েছে তাদের কাছে। এটিও তারা দখল করে রেখেছিলেন। বাকি ৩৪ ডিসিমেল মৌরসি সম্পত্তি হিসেবে আমরা এর দাবিদার। এগুলো আমার নানার বাড়ির সম্পত্তি। মা সেই সূত্রেই মালিকানা পেয়েছেন। আমরা দখল করিনি, বরং আমাদের সম্পদ আমরা বুঝে নিয়েছি। যা তারা দীর্ঘদিন জবরদখল করে রেখেছিলেন। যৌথ বাহিনীর হস্তক্ষেপেই তারা আমাদের সেই জায়গা বুঝিয়ে দিয়েছেন। তাদের সামনে তিন বার শুনানি হয়েছে। এসময় তারা বিদ্যুৎ বিল, ভাড়ানামা ছাড়া আর কোনো প্রমাণই তারা দেখাতে পারেননি।

ঘটনায় আহত সিলেট মহানগর যুবদলের সহ সভাপতি বেলাল আহমদ ও ডানে ৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি লখন আহমেদ।

স্থানীয় এলাকাবাসিরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন থেকে আফরোজ বক্ত ম্যানশন মার্কেটের জায়গা নিয়ে তাদের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ চলছিলো। গত ২৪ জুন মঙ্গলবার দুপুরে এই মার্কেটে একটি সাইনবোর্ড লাগানো নিয়ে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে। এসময় বহিরাগত কিছু সন্ত্রাসীরা আক্রমন করলে স্থানীয় এলাকাবাসিরা তাদের প্রতিরোধ করে। এ ঘটনার সংবাদ শুনে দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরে সেনাবাহিনী সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরির্দশন করে কদমতলী এলাকায় তারা অবস্থান নেয়।

 

শেয়ার দিয়ে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন, ধন্যবাদ।




© All rights reserved © 2012 Newsmirror24.news
Design BY Web Home BD
ThemesBazar-Jowfhowo