বিশেষ প্রতিবেদক
ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ফ্যাসিস্ট দলের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে গেলেও সিলেটে দাপটের সঙ্গে চলছেন যুবলীগের এক ক্যাডার। তার দাপট, জুলুম অত্যাচার আর চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন সাধারণ মানুষ। তার বিরুদ্ধে নগরীর দু’টি থানায় একাধিক মামলা ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) থাকলেও তাকে রহস্যজনক কারণে ধরছে না পুলিশ। আলোচিত এই যুবলীগ ক্যাডারের নাম সৈয়দ মকসুদ আহমদ। তিনি বিমানবন্দর থানার লালবাগ বাছাটিলা এলাকার সফর আলীর ছেলে।
স্থানীয় লোকজনসহ ভূক্তভোগীরা জানিয়েছেন, যুবলীগ ক্যাডার মকসুদের চাঁদাবাজি ও রাহাজানিসহ নানা অপরাধ-অপকর্মে এলাকাবাসী অতীষ্ট। বিমানবন্দর তথা লালবাগ এলাকায় জমি কেনা, ভবন নির্মাণ করতে হলে মকসুদকে দিতে হয় টাকা। অন্যথায় তার সহযোগীরা জমি কেনা ও নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। চাঁদা না দিয়ে জমি ক্রয় করলে পরিনতি ভালো হবেনা বলে হুমকি প্রদান করে। একজন ভুক্তভোগী জানান, এক সময় যার রিকশা ভাড়ার পয়সা ছিল না এখন তার বিরাট প্রভাব প্রতিপত্তি। প্রাইভেটকার ছাড়া তিনি এখন চলতেই পারেন না। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী গা ঢাকা দেন। গ্রেফতার আতঙ্কে দেশে বিদেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। নানা মামলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে রয়েছেন। কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য যে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপসহ না অপরাধে জড়িত আওয়ামী যুবলীগের ডেভিল, মকসুদ প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সাথে সাথে পূর্বের মতোই চালিয়ে যাচ্ছেন নানা অন্যায় ও অবৈধ কার্যক্রম। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ নেতাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে নিজেকে অনেক ক্ষমতাধর হিসেবে পরিচয় দিয়ে জনসাধারণকে বø্যাকমেইল করে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা ও জমিজমা। একাধিক মামলার এই আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে দেখা দিয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। এলাকার জনৈক আবদুস সাত্তার বলেন, প্রায়ই লালবাগ, বিমানবন্দর প্রভৃতি এলাকা থেকে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করলেও সৈয়দ মকসুদ আহমদকে আজও আইনের আওতায় নেওয়া যায়নি। তারা বলেন, মকসুদ আহমদ এখনো এলাকায় তার সন্ত্রাসী আর অবৈধ কার্যকলাপ অব্যাহত রেখেছে। কোন খুঁটির জোরে কুখ্যাত এই অপরাধী নির্ভয় জীবন যাপন করছেন তা বোধগম্য নয়।
একজন ব্যবসায়ী জানান, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে মকসুদ যে তান্ডব চালিয়েছিলো সরকার পরিবর্তনের পর তা দ্বিগুন আকার ধারণ করেছে। তার সন্ত্রাসী বাহিনী আর আধিপত্যের জন্য তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয় পান দোকান থেকে শুরু করে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা পয়সা আদায় করারও অভিযোগ রয়েছে মকসুদের বিরুদ্ধে।
বিমানবন্দর থানা সূত্রে জানা যায়, গত ২১/৭/২০২৫ইং লাল বাগের মকসুদ আহমদ, বাছাটিলা দক্ষিণ লালবাগের মখন মিয়ার ছেলে কামরান ও আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (নং-৯৯৮) লিপিবদ্ধ করেছেন দক্ষিণ লালবাগ এলাকার মো. শফিক মিয়ার ছেলে মো. সেবুল মিয়া। এতে তিনি উল্লেখ করেন তার আপন ছোট ভাই প্রবাসী মো. সেলিম মিয়া ২০২২ সালে সাব কাবালা দলিল (নং-৮০৬৪/২২) মূলে ৭ শতক জমি ক্রয় করেন। যার তপশিল জেলা সিলেট, উপজেলা সদর, মৌজা বড়শালা, জেএল নং এসএ- ৫৪, বিএস ৪৪, খতিয়ান নং এসএ ২২৯ নামজারী খতিয়ান নং ৩৭৩৯, বিএস খতিয়ান নং ২৩৪০, এসএ দাগ নং ১৫৩২, বিএস দাগ ১৯০৩। কিন্তু ২২ জুলাই দুপুর ২টার দিকে জমির মো. সেবুল মিয়া শ্রমিকদের নিয়ে উক্ত ভ‚মিতে পরিস্কারের কাজ করছিলেন। হঠাৎ মকসুদ আহমদ ও তার দুই সহযোগী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করতে বলে। তখন মো. সেবুল মিয়া কাজ করতে নিষেধ করার কারণ জানতে চাইলে মকসুদ বলেন তার সাথে বৈঠক না করে উক্ত ভুমিতে কোন কাজ করতে পারবেন না। তখন মকসুদ ও তার সহযোগিরা লাঠিসোটা নিয়ে উক্ত ভ‚মিসংলগ্ন স্থানে অবস্থান করছিলো। এসময় তারা শ্রমিকদের গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন। সেবুল মিয়া বিষয়টি স্থানীয় মুরব্বিদের অবহিত করলে আমাকে ভবিষ্যতে উক্ত ভুমিতে কাজ করতে দেখলে খুন করে ফেলবে এবং ভ‚মি দখল করে নেবে বলে হুমকি প্রদান করে। এ অবস্থায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন মো. সেবুল মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা। সৈয়দ মকসুদ আহমদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মলেড থানায় দায়েরকৃত কয়েকটি মামলার নম্বর হলো ১০/৪৪৯, ৪৯৯, ৭/৪০৬, ১/৪০০, ১৯/৪১৮, তাছাড়া মকসুদ আহমদের বিরুদ্ধে রয়েছে আরো একাধিক মামলা।
এ ব্যাপারে বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমান বলেন, মকসুদের বিরুদ্ধে মামলা থাকার বিষয়টি জানি না। মামলা থাকলে অবশ্যই আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়া হবে।