নিউজ মিরর ডেস্ক
সিলেট নগরীর কদমতলী পয়েন্টে ‘আওয়ামী দোসর’ ট্যাগ দিয়ে প্রায় ৩০ কোটি টাকার মৌরসি সম্পত্তি জবর দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে সিলেট বিএনপির সহ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ও মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি বেলাল আহমদের বিরুদ্ধে। ৫ আগস্টের পর পট পরিবর্তনের সুযোগে গত ২৮ মার্চ তিনি ওই এলাকার একটি মার্কেটসহ ৮৪ শতক জায়গা দখল করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন সম্পত্তির মালিক পক্ষ। এছাড়াও তিনি জায়গার প্রকৃত মালিককে রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করতে এক সময়ের ২৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান সিলেট মহানগর ২৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নির্বাহী সদস্য তাজুল ইসলাম টিপুকে বানিয়েছেন ‘আওয়ামী লীগের দোসর’!
সোমবার (৩০ জুন) সিলেট জেলা প্রেসক্লাব কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তাজুল ইসলাম টিপুর মা সুনারা বেগমের পক্ষে তার পুত্রবধূ ফারজানা আক্তার বাবলী এই অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমার মোমিনখলা মৌজার এসএ জেএল নং-১১১ ও বিএস জেএল নং-৭৮, এসএ খতিয়ান নং-৫৯৮, বিএস খতিয়ান নং-৪৭৪, এসএ দাগ নং-১০৯৯, বিএস দাগ নং-১৪১৭ ও ১৪১৬, মোয়াজী ০.২২১৮ একর ভূমি। এই তফশিল বর্ণিত ভূমি সুনারা বেগমের শশুর মরহুম জহির বক্স প্রকৃত মালিক আব্দুর রহিমের কাছ থেকে ১৯৫৩ সালে ক্রয় করে ছিলেন। পরে তিনি এই সম্পত্তির স্বত্ববান থাকা অবস্থায় সকলের জ্ঞাতসারে ভোগদখল থাকা অবস্থায় ওনার ছেলে আফরোজ বক্স ও অন্যান্য উত্তরাধীকারীগণকে রেখে মারা যান। পরে আমার স্বামী আফরোজ বক্স মারা যাবার পর আমার ছেলে ও দুই মেয়ে দেশের আইন মোতাবেক বর্ণিত ভূমিতে মালিক স্বত্ববান থেকে সকলের জ্ঞাতসারে ভোগদখলকৃত ভূমিতে মার্কেট ও বাড়ি-ঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসছেন। কদমতলী পয়েন্টে তাদের একটি ‘আফরোজ ম্যানশন’ মার্কেটসহ ৮৪ শতক জায়গা রয়েছে। তার পরিবার মৌরসি সূত্রে পায় এই সম্পত্তি। তার মেয়ে তামান্না বক্স, তানিয়া বক্স, ছেলে তাজুল ইসলাম টিপু বক্সের দাদা এই জায়গার প্রকৃত মালিক।
তিনি বলেন, ১৯৯০ সালে আমার স্বামী আফরোজ বক্সের মৃত্যুর পর থেকে গত ৩৫ বছর ধরে তারা এই সম্পত্তি দেখাশোনা করছেন। কদমতলীর এই ভূমিতে ২০০০ সালে সুনারা বেগমের ছেলে তাজুল ইসলাম টিপু বক্স তার বাবা আফরোজ বক্সের নামে একটি মার্কেট নির্মাণ করেন। মার্কেট থেকে প্রতি মাসে তার ছেলে টিপু দোকানদারদের কাছ থেকে ভাড়া ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা তুলে। টিপু বক্স এই মার্কেটের বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, সিসিকের হোল্ডিং টেক্স পরিশোধ করে আসছেন।
তাদের এই সম্পত্তির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা। ২০১৪ সালে তাদেরই আত্মীয় মোছা. হাওয়ারুন নেছা গং মাননীয় যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে একটি স্বত্ব বাটোয়ারা মামলা নং-৯৫/২০১৪ দায়ের করেন। যা বর্তমানে চলমান রয়েছে। এরপর ২০২৩ সালে মোছা. হাওয়ারুন নেছা গং মাননীয় যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে আরেকটি স্বত্ব বাটোয়ারা মামলা নং-১৩৭/২০২৩ইং করে তারা সুনারা গংদের বিরুদ্ধে অন্তবর্তীকালীন আদেশসহ অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চায়। কিন্তু বিজ্ঞ আদালত তাদের এই আরজি খারিজ করে দেন।
এই দুটি মামলার পক্ষ বাদী সালেহা বেগম। তার স্বামী মৃত আবদুল গফফার। তাদের ছেলে সিলেট বিএনপির সহ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ও মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি বেলাল আহমদ। বেলাল আহমদ তার দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে গত ২৭ মার্চ আমার ছেলেকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ ট্যাগ দিয়ে তার উপস্থিতিতে তাদের বাড়ি থেকে টিপু ধরে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ৫ আগস্টের পর পট পরিবর্তনের সুযোগে গত ২৮ মার্চ তিনি তাদের মার্কেটসহ ৮৪ শতক জায়গা দখল করার চেষ্টা করেন। বেলাল আহমদ তার ছেলেকে রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করতে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ বলে প্রচার করছেন।
গত ২৮ মার্চের ঘটনায় তাজুল ইসলাম টিপু বক্স মাননীয় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৪৫ ধারায় একটি মামলা করেন। মামলা নং-২৪/২০২৫ইং। এই মামলায় আসামি করা হয় মদিনা মার্কেট এলাকার নিবাস সি-২০ নাম্বার বাসার মৃত মাহমদ আলীর ছেলে আবদুল মনির (৪০) ও আবদুল মুমিন (৫০) এবং নগরীর নবাব রোডের মৃত আবদুল গফফারের ছেলে সিলেট বিএনপির সহ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ও মহানগর যুবদলের সহ সভাপতি বেলাল আহমদকে। এই মামলায় আদালত দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি মিজানুর রহমানকে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার এবং আসামিদের কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করে আগামী ১১ আগস্ট সরেজমিন তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
এই সম্পত্তি নিয়ে ৫ আগস্টের পর সিলেট বিএনপির সহ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ও মহানগর যুবদলের সহ সভাপতি বেলাল দলীয় পরিচয়ে আমাদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিতে শুরু করেছেন। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে আমার ছেলে তাজুল ইসলাম টিপুকে গত ২৭ মার্চ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা তাকে ধরিয়ে নেওয়া হয়। জোর করে আমাদের জায়গা তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে বলা হয়। টিপু তা না করায় তারা ২৮ মার্চ বিকেলে এসে আমার জায়গা দখল করা চেষ্টা করেন। এ নিয়ে আমি আইন-শৃঙ্খলার বাহিনীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো কাজ হয়নি। দলীয় পরিচয় ও পেশি শক্তির কাছে তারা পরাজিত বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, গত ২৪ জুন মঙ্গলবার দুপুরে আমার ছেলে টিপু মার্কেটে গেলে খবর পেয়ে সিলেট বিএনপির সহ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ও মহানগর যুবদলের সহ সভাপতি বেলাল, ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি লখন আহমদ ও তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী এসে টিপু বক্সসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপর হামলা করে। তারা মার্কেট দখলের চেষ্টা করে। তবে স্থানীয় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তারা সন্ত্রাসী বাহিনীকে প্রতিহত করেন। এ ঘটনায় টিপুসহ উভয় পক্ষের লোকজন আহত হন। তারা ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৪৫ ধারার আদেশ অমান্য করে এই হামলা করেছে। তাদের দাবি পুলিশ রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছে।
এই হামলার এই ঘটনায় উল্টো টিপুসহ ১৫ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৬০-৭০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেছেন নবাব রোড এলাকার বাসিন্দা আবদুল হক। টিপু বক্স আহত হলেও অদৃশ্য কারণে তাদের দেওয়া মামলা নেয়নি দক্ষিণ সুরমা থানার পুলিশ। তাদের দাবি বিএনপি নেতা বেলাল গং প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে তারা মামলা করতে পারছেন না।
এই মামলার কারণে টিপু বক্স ঘর ছাড়া। তার পরিবারের জীবন এখন শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। অজানা আতঙ্কের কারণে বাচ্চাদেরও বিদ্যালয়ে নিয়ে যেতে পারছেন না।
তিনি দাবি করে বলেন, আমরা বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, সিসিকের হোল্ডিং টেক্স পরিশোধ করি। আমাদের সঙ্গে ভাড়াটে বিভিন্ন দোকানিদের বিভিন্ন মেয়াদে চুক্তিপত্র রয়েছে। বর্তমান মাঠ জরিপও আমাদের। ২০১৪ সালে একই দাগে বাংলাদেশ সরকারের বিপক্ষে আমরা আমাদের (আফরোজ গংয়ের) ১৬ শতক ভূমির জন্য আপিল করলে বিজ্ঞ হাইকোর্ট বিভাগ আমাদের ১৬ শতক ভূমি ফিরিয়ে দেয়। তাহলে তারা কীভাবে আমাদের এখানে সম্পত্তি দাবি করে জমি মার্কেট জবর দখলের চেষ্টা করে? ওরা আদালতে বাটোয়ারা মামলা করেছে, বিজ্ঞ আদালত এর রায় দিবেন। আদালতের আদেশ অমান্য করে বিএনপি নেতা বেলাল গংরা কীভাবে দখল করার চেষ্টা করে। দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশের নীরব ভূমিকার কারণে আমরা আতঙ্কিত। তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগীতা কামনা করেন।