নিউজ মিরর ডেস্ক
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৪ সালে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে বালাগঞ্জ উপজেলার শিত্তরখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষন বন্ধ করে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভাষন প্রচার নিয়ে একটি মামলা হয়েছিলো বালাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের বর্তমান আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ফুজায়েল আহমদ খান সাজু (৩৫) এর বিরুদ্ধে। মামলা নং- ০৫(১৭/১২/২৪ইং)। সাজু উপজেলার জামিয়া হুসাইনিয়া গহরপুর মাদ্রাসার প্রবীন শিক্ষক মাওলানা ইউনুছ খানের ছেলে। মামলার বাদী আওয়ামী লীগ নেতা মৃত মো. আব্দুল করিম তালুকদার। তিনি উপজেলার শিওরখাল এলাকার মো. আব্দুল আজিজের ছেলে।
এই মামলায় তার সাজা হয় এবং এই মামলায় কারা বরনও করেছে সাজু। কারা বরনের পরে সে জামিন ছিলো। এরই মাঝে আওয়ামী লীগ সরকার পালিয়ে যাবার পর তার সেই মামলা নিষ্পত্তির জন্য বিএনপির দলীয় সব মামলার সাথে হাইকোর্টে আবেদন করেন সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী। সম্প্রতি সেই মামলায় তার বিরুদ্ধে আবারও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিলো। বিষয়টি জানতেন না ফুজায়েল আহমদ খান সাজু (৩৫)।
জানা গেছে, চলতি মাসের ৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে বালাগঞ্জ থানার পুলিশের সাদা পোষাকধারি একটি দল মাদরাসা বাজার ব্রীজ এলাকা থেকে সাজুকে গ্রেফতার করে। এসময় পুলিশের সাথে তার ধস্তাধস্তি হয় এবং সাজু চিৎকার শুরু করেন। পুলিশের সাথে তার ধস্তাধস্তির কারনে উভয় পক্ষ অল্প আহত হন। এসময় উত্তেজিতো জনতার সহযোগীতায় হাতকড়াসহ সাজু পালিয়ে যায়। পরে বালাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দিন আহমদ ভূঁইয়া সাজুর বাড়িতে গিয়ে তার বাবা মাওলানা ইউনুছ খানের সাথে স্বাক্ষাত করে সাজুকে আইনের হাতে তুলে দিতে বলেন। এসময় বিএনপি নেতা তুফায়েল আহমদ সুহেলসহ স্থানীয় মুরব্বিরা উপস্থিথ ছিলেন। ওসি এসময় সাজুর বাবাকে আস্বস্থ করেন সাজু এবং স্থানীয় জনতা কারো কোনো ক্ষতি হবেনা। তিনি তার বড় ছেলে রাজু খানের মাধ্যমে রাত সাড়ে বারটার দিকে সাজুকে ওসির কাছে হাতকরা পরা অবস্থায় সোপর্দ করেন। এ সময় পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তির কারনে সাজুর বাবা নিজ উদ্যোগে আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা খরচ বাবদ ৬০ হাজার টাকা দেন। এসময় তিনি ছেলেকে পুলিশের সাথে থানায় পোছে দিয়ে আসেন।
পরদিন শুক্রবার দুপুরে মাওলানা ইউনুছ খান জানতে পারেন গ্রেফতারকৃত তার ছেলে সাজু; সাজুর ভাই রাজু খানসহ একই এলাকার শাওন, শিমুল, আজই, টিটু, সালমান, সাব্বির, নানু মিয়া নামোউল্লেখ করে ৪০/৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে পুলিশ এসল্ট মামলা দায়ের করা হয়েছে। এস আই শাহ ফরিদ আহমেদ বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। বালাগঞ্জ থানার মামলা নং-০৭ তাং-০৮/০৮/২৫ ইং।
এদিকে, ৮ আগস্ট শুক্রবার আসামি সাজুকে আদালতে সোপর্দ করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। পুলিশ এসল্ট মামলায় আসামী সাজুকে রিমান্ডে নেবে পুলিশ বলে জানিয়েছে থানার একটি সূত্র।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সাদা পোষাকধারি পুলিশের এসআই শাহ ফরিদ, এসআই বিণয় ভুষন চক্রবর্তী, এসআই সৌরভ সাহা, এএস আই কানন কুমার দাস, এএসআই সুবীর চন্দ্র দেব সঙ্গীয় ফোর্সসহ মাদরাসা বাজার ব্রিজের উপরে আসামি সাজুকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারের পর তার হাতে হাতকড়া পরানো হয়। এসময় সাজু পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি ও চিৎকার করেন। মুহুর্তেই সাজুর ভাই রাজুসহ তাদের পক্ষের ১০-১২ জন যুবক এসে পুলিশ অবরুদ্ধ করে হাতকড়া খুলে দেওয়ার দাবী জানান। পুলিশ সাজুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা দেখিয়ে হাতকড়া খুলে দিতে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে তর্কবির্কের জেরে হাতকড়া পড়া অবস্থায় সাজু পালিয়ে যায়।
সাজুর বাবা জামিয়া হুসাইনিয়া গহরপুর মাদ্রাসার প্রবীন শিক্ষক মাওলানা ইউনুছ খান বলেন, মামলার বাদী আওয়ামী লীগ নেতা মৃত মো. আব্দুল করিম তালুকদারের এই মামলায় আমি নিজেও জেল খেটেছি। বালাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দিন আহমদ ভূঁইয়া আমার বাড়িতে এসে আমার সাথে স্বাক্ষাত করে সাজুকে আইনের হাতে তুলে দিতে বলেন। এসময় বিএনপি নেতা তুফায়েল আহমদ সুহেলসহ স্থানীয় মুরব্বিরা উপস্থিথ ছিলেন। এসময় ওসি আমাকে আস্বস্থ করেন সাজু এবং স্থানীয় জনতা কারো কোনো ক্ষতি হবেনা। তিনি তার বড় ছেলে রাজু খানের মাধ্যমে রাত সাড়ে বারটার দিকে সাজুকে ওসির কাছে হাতকরা পরা অবস্থায় সোপর্দ করেন। এ সময় পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তির কারনে আমি নিজ উদ্যোগে আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা খরচ বাবদ ৬০ হাজার টাকা দেই। পরদিন শুক্রবার দুপুরে জানতে পারলাম আমার ছেলেসহ অন্যান্যদের আরেকটি পুলিশ এসল্ট মামলা দেয়া হয়েছে। এটাই আইনের বিচার!
এক মামলায় নিয়ে অন্য মামলায় জড়ানো দু:খজনক বলে মন্তব্য করেছেন সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী।
মামলার বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বালাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি ফরিদ উদ্দিন আহমদ ভুঁইয়া।