রবিবার, ০৮ Jun ২০২৫, ০৩:৫২ পূর্বাহ্ন

নোটিশ
সাইটের সংস্কার কাজ চলছে, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের পাশে থাকার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।
গণঅভ্যুত্থানে আহত গোয়াইনঘাটের মতিন খোঁজ নিলেন কাইয়ুম চৌধুরী

গণঅভ্যুত্থানে আহত গোয়াইনঘাটের মতিন খোঁজ নিলেন কাইয়ুম চৌধুরী

নিউজ মিরর ডেস্ক
জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনে আহত গোয়াইনঘাটের আব্দুল মতিনের জীবন এখন সংকটাপন্ন। তাঁর চোখে গুরুতর আঘাত লাগায় চক্ষু ঝুঁকিতে রয়েছে বলে চিকিৎসকেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এই প্রেক্ষাপটে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, “যে লক্ষ্য নিয়ে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছিল—একনায়কতন্ত্রের অবসান, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ—তা এখনও পূর্ণতা পায়নি। শহীদ ও আহতদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন করতে ব্যর্থতা শুধু প্রশাসনিক নয়, এটি সরকারের মানবিক ও গণতান্ত্রিক দায়িত্ববোধ হারানোরও প্রমাণ।”

রবিবার (২৫ মে) দুপুর ১২টায় ঢাকার পিজি হাসপাতালের কেবিন ব্লকে চিকিৎসাধীন মতিনের খোঁজখবর নিতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, “এটি এখন কেবল রাজনৈতিক ইস্যু নয়—একটি গভীর মানবিক ও নৈতিক প্রশ্ন। হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তে নির্মিত যে স্বপ্নের বাংলাদেশ, তা আজ ফ্যাসিবাদের ছায়ায় ঝুঁকে পড়ছে। আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে ঘোষণা দিয়েছি—দল ক্ষমতায় এলে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সকল শহীদ ও আহতের দায়িত্ব রাষ্ট্র গ্রহণ করবে।”

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তোয়াক্কুল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আব্দুল মতিন (৩৩) গত বছরের (২০২৪) ১৯ জুলাই সিলেটের বন্দরবাজারে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন। তখন বিএনপির একটি মিছিলে সাংবাদিক তুরাব গুলিবিদ্ধ হওয়ার প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে তিনি গুলিবিদ্ধ হন।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর চোখ, মাথা ও বুকে গুলির স্প্লিন্টার বিদ্ধ হয়েছে। বর্তমানে তিনি ঢাকা পিজি হাসপাতালের কেবিন নং ৪০৭-এ চিকিৎসাধীন রয়েছেন। জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞরা তাঁর চোখে স্থায়ী ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এবং অস্ত্রোপচারে আপাতত অপারগতা জানিয়েছেন।

চিকিৎসার উচ্চ ব্যয় এবং পারিবারিক আর্থিক সংকটে আজ বিপর্যস্ত মতিনের পরিবার। এই অবস্থায় দলীয় সহানুভূতির পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি মানবিক সহায়তারও প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

আব্দুল মতিন বলেন, “আমি আমার আহত হওয়ার বিচার চাই। যারা আন্দোলনের সুফল ভোগ করছেন, বড় বড় পদে আছেন, তারা কি শহীদদের আত্মত্যাগ ভুলে গেছেন? তাঁদের তো শহীদ পরিবারের খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল। আন্দোলনের একক দাবিদার হয়ে উঠলে আন্দোলনের চেতনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”

বিএনপি নেতা কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, “যারা আজ উপদেষ্টা হয়েছেন, নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন, ডিসি-এসপির দপ্তরে নিয়মিত ওঠাবসা করছেন—তাঁদের কাছে কি শহীদ-আহতদের তালিকা নেই? আন্দোলনের ভিত্তি যাঁদের রক্ত, তাঁদের পরিবার আজ উপেক্ষিত—এটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও লজ্জাজনক।”

তিনি আরও বলেন, “গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার হরণ করে রাষ্ট্রক্ষমতায় টিকে থাকার অপচেষ্টা চলছে। রাজনৈতিক সংস্কার অবিলম্বে বাস্তবায়ন এবং অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচনই এই সংকট উত্তরণের একমাত্র পথ। নতুবা অস্থিরতা বাড়বে।”

তিনি রাষ্ট্র ও সমাজের সকল স্তরের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির আশঙ্কা স্পষ্ট। এ সংকট মোকাবেলায় রাজনৈতিক দল, সেনাবাহিনী এবং নাগরিক সমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।”

আব্দুল মতিন আজ শুধু একজন আহত রাজপথের কর্মী নন, বরং এই সময়ের এক সাহসী প্রতিনিধি—যিনি গণতন্ত্র ও ন্যায়ের পক্ষে নিজের জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমেছিলেন। তাঁর মত বহু তরুণ ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন, কেউ পঙ্গু হয়েছেন, কেউ কারাগারে বন্দি।

জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতরা আমাদের জাতীয় ইতিহাসের গর্বিত অংশ। তাঁদের আত্মত্যাগ আমাদের জাতি পুনর্গঠনের চেতনাকে জাগিয়ে রাখবে।

শেয়ার দিয়ে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন, ধন্যবাদ।




© All rights reserved © 2012 Newsmirror24.news
Design BY Web Home BD
ThemesBazar-Jowfhowo