নিউজ মিরর ডেস্ক
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কদমতলিতে আত্মীয়দের ভূসম্পত্তি অন্যায়ভাবে দখল করতেই আওয়ামী লীগের দোসর স্থানীয় বাসিন্দা তাজুল ইসলাম টিপুবক্স ও তার সহযোগিরা উঠেপড়ে লেগেছেন। এরই অংশ হিসেবে গত ২৪ জুন কদমতলির মাহমুদ কমপ্লেক্সে ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছেন তিনি।
বুধবার (২ জুলাই) বেলা ২টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন মদিনা মার্কেট এলাকার নিবাস সি/২০-এর বাসিন্দা মরহুম মাহমুদ আলীর ছেলে মো. আব্দুল মনির।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন- আমরা দক্ষিণ সুরমার কদমতলি এলাকার বাসিন্দা ছিলাম। পরে মদিনা মার্কেট এলাকায় স্থানান্তর হই। আমার মামাতো ভাই- কদমতলি এলাকার মরহুম মো. আফরোজ বক্সের ছেলে টিপু বক্স আমাদের ৮৪ শতক জায়গা ও এর উপর স্থাপিত মার্কেট-দোকানপাট জবরদখল করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। এ লক্ষ্যে তিনি গত ২৪ জুন শতাধিক ভাড়াটে গুন্ডা-সন্ত্রাসী নিয়ে মার্কেটে হামলা ও ভাঙচুর চালান। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় একজন আসামি গ্রেফতার হয়েছেন। তবে টিপু বক্স এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় আমরা জান-মালের নিরাপত্তাহীনতায় আছি।
সংবাদ সম্মেলনে মো. আব্দুল মনির জানান- কদমতলি এলাকায় ১০৯৯, ১১০০ ও ১১০১ নং দাগে মোট ১১৮ শতক ভূমি রয়েছে। এর মধ্যে ৫০ শতক জায়গা তার বাবা মাহমুদ আলী মৌরসি সূত্রে পেয়েছেন। বাকি ৬৮টি শতক জায়গার মধ্যে ১৯৫৩ সালে তৎক্ষালীন জায়গার মালিক আবদুর রহিমের কাছ থেকে ৩৪ শতক জায়গা টিপু বক্সের দাদা জহির বক্স এবং ৩৪ শতক জায়গা চাঁন মিয়া ও আব্দুর রউফ নামক মালিকের কাছ থেকে মাহমুদ আলী ক্রয় করেন। মাহমুদ আলীর মৃত্যুর পর আব্দুল মনিররা ১০ ভাই-বোন এই ভূ-সম্পত্তির মালিক হন। পরবর্তীতে ওই জায়গায় মার্কেট ও দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা গড়ে তুলেন তারা। মদিনা মার্কেট এলাকায় তারা বসতি গড়লে আত্মীয়তার সূত্রে কদমতলির তাদের অংশের মার্কেট ও দোকানপাট দেখভাল করতেন মো. আফরোজ বক্স। ১৯৯০ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করলে পরবর্তীতে তাঁর ছেলে-ভাতিজারা এগুলো দেখাশুনা করতেন। ওই সময় তারা নিয়মিত ভাড়াও প্রদান করতেন মনিরদের। কিন্তু ২০০০ সালের দিকে টিপুবক্সসহ তার পরিবারের লোকজনের মধ্যে লোভ দেখা দেয় এবং আব্দুল মনিরদের পুরো ৮৪ শতক জায়গা ও এর স্থাপনাগুলো দখলের পায়তারা শুরু করেন। বিগত সরকারের সময়ে টিপু বক্স আওয়ামী প্রভাব খাটিয়ে জায়গার দাগ নম্বরের রেকর্ড ভুল দেখিয়ে একটি পর্চা বের করে নেন। বিষয়টি জানতে পেরে মনিরের পরিবারের পক্ষ থেকে রেকর্ড সংশোধনের জন্য মামলা করা হয়।
একপর্যায়ে টিপু বক্সরা মার্কেট-দোকানপাটের ভাড়ার টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেন উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল মনির বলেন- টিপু বক্সের সকল অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে সহযোগিতা করেন তার চাচাতো ভাই সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হেলাল বক্স। ফলে আমরা ২০১৪ সালে উচ্ছেদ মামলা করলেও হেলাল বক্স দলীয় প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসনকে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেননি। পরবর্তীতে চব্বিশের ৫ আগস্ট পরে আওয়ামী লীগের দৌরাত্ম্য কমে গেলে আমরা সেনাবাহিনীর কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করি। সেনাবাহিনী দুপক্ষকে দফায় দফায় ডেকে বৈঠক করে সব কাগজপত্র দেখে সর্বশেষ টিপু বক্সকে নির্দেশ দেন- আমাদের জায়গা-মার্কেট এসব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য। সেনাবাহিনীর নির্দেশে এ বছরের ২৮ মার্চ পরদিন আইনজীবি ও সরকারি সার্ভেয়ারের উপস্থিতিতে টিপু বক্স ও হেলাল বক্স আমাদের ৮৪ শতক ভূমি ও স্থাপনা সমঝিয়ে দেন। এসময় একটি হস্তান্তর চুক্তিপত্রও হয়। এতে হেলাল বক্স স্বাক্ষর করলেও টিপু বক্স করেননি। এরপর থেকে আমাদের এই ভূ-সম্পত্তি আমাদের দখলেই ছিলো। কিন্তু গত ২৪ জুন আমাদের মার্কেট ও জায়গা দখল করতে ফের অপচেষ্টা চালান টিপু বক্স। শতাধিক ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে আমাদের মার্কেটে হামলা ও ভাঙচুর চালান। আমরা খবর পেয়ে সেখানে গেলে আমাদের উপর হামলা চালানো হয়। এতে আমরা ৬ জন আহত হই। এর মধ্যে আমার ভাগনা বেলাল আহমদ গুরুতর আহত হন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
এছাড়াও হামলার সময় টিপু বক্স ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের দুটি মোটরসাইকেল লুট করে নিয়ে যায়। আমরা প্রাণে বাঁচতে সেনাবাহিনীকে অবগত করলে তারা উপস্থিত হওয়ার আগেই সন্ত্রাসী বাহিনী ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ ঘটনায় আমরা পরদিন থানায় মামলা দায়ের করি। কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা অতীতেও পাইনি, এখনো পাচ্ছি না।
আব্দুল মনির বলেন- নিজের ছেলের (টিপু বক্স) অপরাধ ঢাকতে ৩০ জুন আমার মামি সুনারা বেগম সংবাদ সম্মেলন করে শুধুই মিথ্যাচার করেছেন। বলেছেন- কদমতলিতে তার শ্বশুরের মৌরসি জায়গা রয়েছে। দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। মূলত তাদের ক্রয়কৃত জায়গা ৩৪ শতক। কিন্তু তারা লোভে পড়ে বার বার আমাদের ৮৪ শতক জায়গা জবরদখল করতে চাচ্ছেন।
এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতা চেয়েছেন সংবাদ সম্মেলনকারী মো. আব্দুল মনির।
সংবাদ সম্মেলনে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন- ছালেহা বেগম, পিয়রা বেগম, হাজেরা বেগম, মো. আব্দুল মোমিন, মো. আব্দুল মান্নান, আহত বেলাল আহমদ, আব্দুল হক ও নিয়ামত উল্লাহ খাসদবিরীসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা।