বিশেষ প্রতিবেদক
আফসার খান সাদেক। সিলেটের বিয়ানীবাজারের চারাবই গ্রামের মৃত মছদ্দর আলী খানের ছেলে। পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের সিডনি স্ট্রিটে বসবাস করেন। তিনি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও লন্ডন ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক।
পলাতক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) এর এমপি প্রার্থী ছিলেন। তিনি সিলেট-৬ আসনের মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করেন কিন্তু মনোনিত হতে পারেননি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, তার নির্বাচনী এলাকায় তার কুকর্মের কারণে তাকে কেউই পছন্দ করতেন না। আর এই বিষয়টি তার নির্বাচনী এলাকার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এবং তৃনমুলের নেতা-কর্মীরা দলের হাইকমান্ড পলাতক প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের বিগত নির্বাচনে তিনি এমপি না হলেও দলের নাম ভাঙিয়ে দেশে করেছেন নানান অপকর্ম।
তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারি, সিলেটে জমি দখল, বাসা দখল, তদবির বাণিজ্য, অন্যকে বাদি সাজিয়ে বিএনপি এবং জামায়াতের লোকদের মামলা দিয়ে হয়রানী, দলীয় নেতা-কর্মীদের দিয়ে বিভিন্ন লোকের উপর হামলা ও প্রশাসনের অপব্যবহার।
সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র ও জনতার উপর হামলার জন্য অবৈধ অস্ত্র মজুদের অর্থের যোগানদাতা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.মোহাম্মদ ইউনুসকে নিয়ে বাজে পোস্ট এবং মন্তব্য, সেনাবাহিনীর লোকদের নিজের আত্মীয় পরিচয়ে প্রতিপক্ষকে হোয়াটসঅ্যাপে হুমকি এবং সিলেটের পুলিশ প্রশাসনের সহযোগীতায় নিজের ভাতিজাকে দিয়ে প্রবাসীর বাসা দখলের চেষ্টা!
একটি সূত্র জানিয়েছে, আফসার খান সাদেক ২০১৬ সালে পূর্ব লন্ডনের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা টাওয়ার হ্যামলেটসের সিডনি স্ট্রিটে নিজের বাড়ির সামনে যুক্তরাজ্যের মাটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম ভাস্কর্য তৈরি করেছিলেন। এই ভাস্কর্য নতুন প্রজন্মের বৃটিশ বাংলাদেশিদের মধ্যে বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে আগ্রহ তৈরি করবে বলে দেশে এসে স্বাক্ষাত করেন রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন, পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ তৎকালীন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতাদের সাথে। নিজের মোবাইলে ছবিও তোলেন, সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে অন্যদের জানান দেন নিজের ক্ষমতার।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি মনোনয়ন না পেলেও পলাতক প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সবার অপব্যবহার করেছেন ইচ্ছে মতো। নিজের বোন শাহনাজ বেগম, আলেয়া বেগম, বড়ভাই আক্তার হোসেন খান ও দিলদার হোসেন খান, ভাতিজা যুবলীগ নেতা মাহবুব, হাবিব, নাইমকে দিয়ে প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে করেছেন সাধারণ মানুষদের হয়রানী এবং প্রশাসনের সর্বোচ্চ অপব্যবহার। তার বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ করেছে তাকে অন্য লোক মাধ্যমে মামলায় আসামী বানিয়ে করা হয়েছে ঘর ছাড়া!
পলাতক আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার ক্ষমতার অপব্যবহারে হয়রানী শিকার সিলেটের মেজরটিলা এলাকার কালা মিয়া, নির্মল কান্তি দাস, নঞ্জন চন্দ্র দাস, ঝর্ণারপারের কনা বেগম ও তার স্বামী, একই এলাকার প্রবাসী জামাল উদ্দিন ও তার স্ত্রী, প্রবাসী জাবেদ আহমেদ। তার ক্ষমতার ভয়ে দেশ ছেড়ে নিজেদের রক্ষা করেছেন অনেকেই। আফসার খান সাদেকের ইন্দনে সিলেটে অন্যকে বাদি বানিয়ে প্রবাসী লোকদের দেশে মামলার আসামী বানানো হয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও লন্ডন ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আফসার খান সাদেকের ফেসবুক পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, তিনি অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.মোহাম্মদ ইউনুস এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র ও জনতাদের নিয়ে বাজে পোস্ট এবং বাজে মন্তব্য অবিরত করে যাচ্ছেন। এছাড়াও পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ হেভিওয়েট নেতাদের নিয়ে তেল মর্দন পোস্ট।
এ বিষয়ে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও লন্ডন ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আফসার খান সাদেকের হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে কল করলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত গণ অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতন ও খুনী হাসিনা পালিয়ে গেলেও দোসররা এখনো সক্রিয় রয়েছে। প্রশাসনে বিভিন্ন সেক্টরে থাকা দোসররা খোলস পাল্টিয়ে ফের সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। ফ্যাসিবাদের পতনের ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও সিলেটের প্রশাসনে এখনো ফ্যাসিবাদের দোসররা সক্রিয় রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, গেলো দুদিন আগে প্রশাসনের লোকদের নিয়ে প্রবাসী জামালের বাসা দখলের চেষ্টা চালিয়েছে আফসার খান সাদেকের ভাতিজা যুবলীগ নেতা মাহবুব!
আগামী পর্বে আরো আসছে বিস্তারিত….