নিউজ মিরর ডেস্ক
মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখায় দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনার মামলা নিয়ে চলছে পুলিশের লুকোচুরি। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, গত ১৭ মার্চ সোমবার সকালে ছাগল ছড়ানো নিয়ে উপজেলার মহারানী দাসের বাজার গ্রামে কথিত আওয়ামী লীগের দোসর টুকা গ্রামের মৃত রবি দাসের ছেলে দীপাল দাসের হুকুমে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ১০/১২জন সন্ত্রাসী দুর্বৃত্ত হামলা চালায় রুবি দাসের বসত বাড়ী ও তার পরিবারের লোকজনের উপর। এসময় আত্মরক্ষার্থে ওই বৈষ্ণব পরিবারের সদস্যরা এগিয়ে আসলে তাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোমবার (১৭ মার্চ) সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে রুবি দাসের বসতবাড়ীতে এই ঘটনা ঘটে। পরে উভয় পক্ষ বড়লেখা থানায় অভিযোগ দায়ের করলে রুবি দাসের অভিযোগপত্র গায়েব করে ফেলে পুলিশ। পরের দিন ১৮ মার্চ আওয়ামী দোসর দীপাল দাসের পক্ষ নিয়ে সুষ্টু তদন্ত ছাড়াই তড়িগড়ি করে তার মামলাটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করে পুলিশ। এতে পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা সুব্রত চন্দ্র দাস সঠিক তথ্য এড়িয়ে গিয়ে পক্ষপাতমূলক মামলাটি রুজু করেন। তিনি এই ঘটনাকে ১৬ মার্চ ঘটেছে বলে উল্লেখ করেছেন। অথচ রোববার (১৬ মার্চ) রুবি দাসের সঙ্গে কারও কোন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি বা তার কোন ছাগল প্রতিপক্ষের সবজি ক্ষেতে যায়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশ বড় অংকের টাকার বিনিময়ে তদন্ত না করেই এই মামলা রুজু করেছে।
অভিযোগ লক্ষ্য করলে দেখা যায়, হয়রানির উদ্দেশ্যে ওই মামলায় প্রায় ৭৫ বয়সি প্রতিবন্ধি বৃদ্ধ লোক ছাড়াও আরো নাবালিকা দুই শিশু কণ্যাকে আসামি করা হয়। এছাড়া সংঘর্ষ এড়াতে গিয়ে বিরোধীদের হামলার শিকার হোন বৈষ্ণব মদন দাস নান্টু। এরপরে শুরু হয় পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘর্ষ।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ঘটনার দিন ও তারিখে তাদের একটি ছাগল সবজি ক্ষেতে গেলে প্রতিপক্ষ বিমল দাস ছাগলটিকে মারধর করতে থাকেন। এসময় রুবি দাসের ভাতিজি শিশু কণ্যা তিন্নি বিষয়টি দেখতে পেয়ে প্রতিবাদ করলে তাকে অশালিন ভাষায় গালিমন্দ করে তাড়িয়ে দেয় বিমল দাস। পরে বাড়ীতে গিয়ে পরিবারের লোকজনদের ব্যাপারটি জানান তিন্নি। একপর্যায় তারা বিমল দাসের বিরুদ্ধে স্থানীয় এলাকায় বিচারপ্রার্থী হলে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বিমলসহ অন্যান্য দুর্বৃত্ত সন্ত্রাসীরা। দীপালের হুকুমে তারা বসতবাড়ীতে ঢুকে হামলা করে বসে ওই বৈষ্ণব পরিবারের উপর। এতে প্রতিপেক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হোন বৈষ্ণব নান্টু, রিন্টু, পিংকু, মিন্টু ও তার পরিবারের মহিলাসহ অন্যান্য সদস্যরা। এঘটনায় প্রতিপক্ষের আরো ২/৩জন আহত হন।
এদিকে স্থানীয়রা নান্টু দাসের ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করে প্রতিবেদককে বলেন, বৈষ্ণব নান্টু দাস বিষয়টি নিস্পত্তি করার উদ্দেশ্যে এগিয়ে গেলে তাকে শংকর নামের একজন লোক তার বাম হাতে দা দিয়ে কোপ দেন। পরবর্তীতে বিষিয়টি সংঘর্ষে রূপ নেয়। এই সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত দশজন আহত হন। আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতাল ক্লিনিকে প্রেরণ করেন। শুরু হয় মামলা কাউন্টার মামলার প্রতিযোগীতা। এতেই বিপত্তি দেখা দেয় পুলিশের হীন উদ্দেশ্যে মূলক বৈষম্য। চলে দর কষাকষি। পুলিশকে টাকা না দেওয়ায় গায়েব হয়ে যায় রুবি দাসের অভিযোগ। ঘুরতে থাকেন দ্বারে দ্বারে।
পরিশেষে ২৫ মার্চ বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের নজরে আসলে নড়েছড়ে বসে বড়লেখা থানা পুলিশ। এবার নতুন আঙ্গিকে আরেকটি অভিযোগ থানায় দাখিল করলে বিষয়টি সুনজরে নেন ওসি নিজেই।
অপরদিকে লুকোচুরি ভুল তথ্য উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত বানোয়াট শংকর দাসের এফআইআর কৃত মামলা সর্ম্পকে জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সুব্রত চন্দ্র দাসের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি ১৬ মার্চ সকালে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে এবং ১৭ মার্চ কোন ঘটনা ঘটেনি বলে জানান।
অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনার তারিখের বিষয়টি মামলার বাদি বলতে পারবেন। শংকরের দেওয়া অভিযোগপত্রে ঘটনার দিন ও তারিখ দুইদিনের বিষয়ে পৃথক ভাবে উল্লেখ রয়েছে।
এ ব্যাপারে বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল কাশেম সরকারের মুঠোফোনে কথা বললে তিনি বলেন, চাঁদা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, কোন প্রতিবন্ধি বৃদ্ধ লোক বা শিশু কণ্যা আসামি করা হলে পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে দেখে তাদের বাদ দেয়া হবে।