বিশেষ প্রতিবেদক
সিলেটে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলাকারী সিলেট জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজেল আহমদ তালুদার। অথচ তার ভয়েই গত জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত অজানা আতঙ্কে ছিল সিলেটের ছাত্র-জনতা। এসব ঘটনায় একাধিক মামলায় আসামি হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনও পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর প্রথম কয়েকদিন সন্ত্রাসী সুজেল আহমদ তালুদার গা-ঢাকা দিয়ে থাকলেও এখন প্রকাশ্যেই নিজ এলাকায় সুনামগঞ্জের জগন্নাথ পুরের সৈয়দ পুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীরা।
জানা যায়, সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর তার দলবল নিয়ে গুলিবর্ষণ ও হামলা চালায় সিলেট জেলা যুবলীগের এই নেতা। গত জুলাই থেকে ৫ আগস্টে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী সুজেল ছাত্র-জনতার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে। এসব ঘটনায় সিলেটের সব থানায় প্রায় অর্ধশতাধিক মামলা হয় তার বিরুদ্ধে।
একটি সূত্র জানায়, সিলেট জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজেল আহমদ তালুকদার যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদের ভাগ্নে। বর্তমানে এই পরিচয়ে সুজেল চলাফেরা এবং বিভিন্ন সংকট মোকাবিলা করছে। ২০২৪ সালে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ যখন লন্ডন থেকে সিলেটে আসেন, তখন তাকে ওসমানী বিমান বন্দরে রিসিভ করে সুজেল তালুকদার ও তার দলবল। এ সময় বিশাল মোটরসাইকেল শোডাউন দিয়ে যুবলীগ নেতা সুজেল আহমদ তালুদার তাকে নগরে নিয়ে আসে। মোটরসাইকেল শোডাউনের কারণে কেন্দ্র থেকে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শাহ্খুররম ডিগ্রী কলেজের সাবেক সভাপতি এসকে শাহিন তার ফেসবুক আইডিতে একটি ভিডিও বার্তায়ও এসব তথ্য জানান। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, সুজেল তালুদার বিএনপি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জঙ্গি বলতে। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
(ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন)।
এ বিষয় নিয়ে নিউজ মিরর এর সাথে কথা হয় যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদের। তিনি সিলেট জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজেল আহমদ তালুকদার তার ভাগ্নে স্বীকার করে বলেন, আমি তাকে কোনো সহযোগীতা করছি না, তাকে আমার রেস্টুরেন্ট ভোজন বাড়ি দেখার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু যুবলীগের নেতা কর্মীরা আমার রেস্টুরেন্ট ভাঙ্চুর করে। সে সিলেটে আছে আমি তাও জানিনা কারণ তার সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। স্থানীয় প্রসাশন বা নেতা কর্মী কাউকেই আমি তার সহযোগীতা করার জন্য বলিনি। আমার আর কিছু বলার নেই।
৪ আগস্টের ওই হামলায় আহত এক শিক্ষার্থী বলেন, ওইদিন ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসী সুজেল তার দলবল নিয়ে গুলিবর্ষণ ও হামলা চালায়। তার এবং তার দলবলের হামলায় আহত হয়েছে অনেকেই। আমি এর বিচার চাই।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কালিবাড়ি এলাকার স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী বলেন, দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে সুজেল এলাকায় চাঁদাবাজি, দখল বাণিজ্য, টিলা কর্তন, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণসহ প্রায় সব ধরণের অপরাধেই যুক্ত ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালিন সময়ে সুজেল বিএনপি ও ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মীদের ঘুম হারাম করে রেখেছিলো। ২০১৫ সালে সিলেটের মদিনা মার্কেট এলাকার কালিবাড়িতে সুজেল তার অফিসে নিজে আগুন ধরিয়ে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীদের উপর মিথ্যা মামলা চাপিয়ে দিয়েছিল। তবে ৫ আগস্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে কয়েকদিন সে গা ঢাকা দিলেও বর্তমানে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদের ভাগ্নে পরিচয়ে এখন সে সুযোগ নিচ্ছে। কালো রংয়ের প্রাইভেট কার দিয়ে হঠাৎ এলাকায় আসে, আবার সুনামগঞ্জের জগন্নাথ পুরের সৈয়দ পুরে তার বাড়িতে চলে যায়। এই পরিচয়ে সবকিছু সে ম্যানেজ করছে।
সুজেলের মতো এখনো আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের অনেকেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এবং খোলস পাল্টিয়ে অনেকেই বিএনপির অঙ্গসংঘঠনের সাথে নিজেদের জড়িয়ে নিচ্ছে।
প্রসাশনের আইন প্রয়োগকারী গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র জানিয়েছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের হামলাকারী আসামীদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরকম কারো অবস্থান জানা থাকলে নিকটস্থ থানা বা গোয়েন্দা সংস্থাকে তথ্য দিয়ে সহযোগীতা করার আহবান করা হয়েছে।