নিউজ মিরর ডেস্ক
নায়ক হওয়ার পরিবর্তে খলনায়ক হলেন জাফলংয়ের দুই ভাই জাহিদ খান ও জিয়ারত খান। তারা জোরপূর্বক রাজত্ব করছিলেন জাফলংয়ে। ঈদের আগে এক মাসে অন্তত ৫ কোটি টাকার বালু তাদের নেতৃত্বেই লুট হয়েছে। পরোয়া করেননি কাউকে। তাদের অপকর্মের প্রতিবাদ করেছিলেন বাংলাবাজারের বিএনপি নেতা ও ইউপি সদস্য রিয়াজ তালুকদার। দলবল নিয়ে তারা সশস্ত্র হামলা চালিয়েছিল রিয়াজ তালুকদারের লোকজনের ওপর। বেশ কয়েকজন আহত হয়ে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেই জাহিদ ও জিয়ারত এবার ফাঁসলেন উপদেষ্টা কাণ্ডে।
গত শনিবার জাফলং পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান এবং জ্বালানি ও খনিজ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। দুই উপদেষ্টার গাড়ি বহর আটকে দেয়ার ঘটনাটি দেশ জুড়ে আলোচিত হয়। আর এই ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন যুবদল নেতা জাহিদ খান, জিয়ারত খান ও ছাত্রদল নেতা আজির উদ্দিন। নেপথ্যে ছিলেন স্ট্যালিন থারিয়াং ও তার ম্যানেজার কামাল। জাফলংয়ের মানুষ পাথর ও বালু কোয়ারি খুলে দেয়ার পক্ষে। তবে উপদেষ্টাদের পথ আটকে দেয়ার ঘটনা তারা ভালো ভাবে নেয়নি। এ কারণে জাহিদ ও জিয়ারতের ডাকে তাদের সাড়া ছিল না। খবর মানবজমিনের।
ওইদিন কিছু সংখ্যক মানুষ নিয়ে উপদেষ্টাদের পথ আটকান বর্তমান ওই লুটেরা। ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় হওয়ার পর দলীয়ভাবে শাস্তির খড়গ নেমে আসে গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ খানের ওপর। রাতের মধ্যে তাকে বহিষ্কার করে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি। পূর্ব জাফলং ছাত্রদল নেতা আজির উদ্দিনকে করা হয়েছে শোকজ। বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টির জন্য তাকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। জাফলংয়ের ঘটনার সাক্ষী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজ। ফলে কারা কারা সেখানে ঘটনা ঘটিয়েছে সেটি সবাই দেখেছেন। ঘটনাকারী আরও কয়েকজনের ওপর এখনো শাস্তির খড়গ নামেনি। ভয়ে আছেন ওই সব নেতারা। দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন ঢাকা ও সিলেটে। তবে; প্রশাসন বসে থাকেনি। আইনি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
উপদেষ্টাদের গাড়ি বহরে বাধা প্রদান করায় রোববার রাতে গোয়াইনঘাট থানায় এসআই ওবায়দুল্লাহ বাদী হয়ে মামলা করেছেন। ওই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে জাহিদ খানকে।
এ মামলায় পাল্টে যায় দৃশ্যপট। জাফলংয়ের বালুখেকোরা পিছু হটেছে। এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে জাহিদ খান। তার সিন্ডিকেটদের অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছে। ২৫শে মে বাংলাবাজারে বালু পাথর সমিতির নেতৃবৃন্দের ওপর জাহিদ ও জিয়ারতের নেতৃত্বে হামলা হয়েছিল।
এ ঘটনায় গুরুতর আহত ৫ জন ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। গোয়াইনঘাট থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই উৎসবের উপস্থিতিতে এ হামলার ঘটনা ঘটলেও মামলা নিতে পুলিশ গড়িমসি করে। ঘটনার দু’দিনের মাথায় গোয়াইনঘাট থানার রিয়াজ তালুকদারের পক্ষে শাহাদাৎ হোসেন নামের আহত হওয়া এ ব্যক্তি থানায় জাহিদ খানকে প্রধান আসামি করে ২৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন।
মামলায় চাঁদাবাজি, হামলাসহ বিভিন্ন ধারা সংযুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তদন্তের নামে কালক্ষেপণ করে পুলিশ ওই মামলা রেকর্ড করেনি। পরে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে চাঁদাবাজির ধারা বাদ দিয়ে রোববার রাতে পুলিশ মামলা রেকর্ড করেছে।
মামলার বাদী জানান- রাতে মামলা রেকর্ডকালীন সময়ে আসামি জিয়ারত খান থানায় অবস্থান করছিলো। ওই সময়ের ছবি তারা সংগ্রহ করেছেন। পুলিশকে বিষয়টি জানালেও জিয়ারতকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। মামলা রেকর্ড হলেও এখনো কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানান তিনি।
গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার তোফায়েল আহমদ জানিয়েছেন- রোববার থানায় দুটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলা করেছেন এসআই ওবায়দুল্লাহ। উপদেষ্টাদের গাড়ি বহরে বাধা দান করায় সরকার বাদী হয়ে এ মামলা করা হয়। এতে প্রধান আসামি জাহিদ খান। রিয়াজ মেম্বারের পক্ষ থেকে ২৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় জাহিদ, জিয়ারতকে আসামি করা হয়েছে। তিনি বলেন, উপদেষ্টার গাড়ি বহরে বাধা ও বাংলাবাজারে শ্রমিকদের ওপর হামলাকারীদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আসামিরা আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় তাদের আটক করা যাচ্ছে না।
জাফলং ও বাংলাবাজারের বালু ও পাথর ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন- পুলিশের গাফিলতির কারণে জাফলংয়ে উপদেষ্টাদের গাড়ি বহর আটকের ঘটনা ঘটে। জাফলং বিটের অফিসার এসআই ওবায়দুল্লাহ ও মধ্য জাফলং বিটের অফিসার এসআই উৎসব আগের রাতেই সব ঘটনা জানতেন। উপদেষ্টারা এলে কী কী করা হবে তাদেরকে জানিয়েই সড়কে ব্যারিকেড দেয়া হয়। কিন্তু উপদেষ্টাদের সঙ্গে ওই সময় সেখানে ছিলেন জেলা পুলিশের এসপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারাও এ অবরোধের বিষয়টিকে ভালো ভাবে নেননি। ফলে ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশেই মামলা রেকর্ড করে আসামি ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
বাংলাবাজার পাথর ও বালু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও গোয়াইনঘাট উপজেলা বিএনপি’র ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক রিয়াজ তালুকদার গতকাল বিকালে জানিয়েছেন- গোয়াইনঘাটে পিয়াইন নদীতে জিয়ারতের নেতৃত্বে এখনো চাঁদাবাজি হচ্ছে। তারা পার্শ্ববর্তী উপজেলা জৈন্তাপুরের সারি-১ নামের একটি বালু মহালের কাগজ দেখিয়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করছে। এ সময় নদীতে চলাচলকারী ভলগেট থেকে পুলিশের নামে ৭ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়। যা সম্পূর্ণ অবৈধ। প্রশাসনকে এ ব্যাপারে স্বচ্ছতা আনতে হবে।