নিউজ মিরর ডেস্ক
সিলেটে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা মহোৎসব। শুক্রবার (২৭ জুন) নগরের রিকাবীবাজার রথযাত্রা প্রাঙ্গণে সিলেটের ২৫টি মন্দির ও আখড়ার অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত হয় শ্রীশ্রী জগন্নাথদেব, বলদেব ও সুভদ্রা মহারাণীর রথযাত্রা।
প্রতিবছরের মতো এবারও রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে রিকাবীবাজার পরিণত হয় এক উৎসবের নগরীতে। রথযাত্রা উপলক্ষে বসেছে ৯ দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী মেলা। মেলায় ছিল গ্রামীণ বাংলার নানা হস্তশিল্প ও লোকজ পণ্যের পসরা।
প্রধান অনুষ্ঠানে ভক্তদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় জগন্নাথদেব, বলদেব ও সুভদ্রার পূজা, আরতী, হরিনাম সংকীর্ত্তন, মহাপ্রসাদ বিতরণ, হরিলুট ও ভক্তিমূলক সংগীতানুষ্ঠান। উৎসবস্থল পরিণত হয় ভক্তি, আনন্দ ও উৎসবের এক অনন্য সমাবেশে।
আয়োজক সিলেট দেবালয় রথযাত্রা উদযাপন কমিটির তত্ত্বাবধানে এবং সিলেট জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসনের যৌথ সহযোগিতায় উৎসবটি নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে মুখরিত হয় রথযাত্রা প্রাঙ্গণ।
রিকাবীবাজার রথযাত্রায় আসা ভ্ক্ত পূণিমা দেবী বলেন, জগন্নাথপ্রভুর কাছে একটাই চাওয়া উনি যেন বিশ্বের সকলের মঙ্গল করেন এবং আমাদের সবাইকে ভালো এবং সুস্থ রাখেন।
আরেক ভক্ত পলাশ চক্রবর্তী বলেন, ২০০ বছরের ঐতিহ্য এই রথযাত্রা, জগন্নাথপ্রভুর কাছে আমরা চাই এই পৃথিবীটা শান্তিময় হোক, বিশ্বজুড়ে শুরু হওয়া অশান্তির বিনাশ ঘটে।
নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয় কঠোর ব্যবস্থা। প্রতিটি রথ মন্দির থেকে আনা-নেওয়ার সময় পুলিশের নিরাপত্তা বলয় ঘিরে রাখে ভক্তদের চলাচলের পথ।
রথযাত্রা সফলভাবে সম্পন্ন করতে এর আগেই জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার ও সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে একাধিক মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাগুলোতে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধি এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা।
এ বছর রথযাত্রায় অংশগ্রহণকারী মন্দির ও দেবালয়গুলো হলো- শ্রীশ্রী কৃষ্ণ বলরাম জিউর আখড়া, লামাবাজার; শ্রীশ্রী জগন্নাথ জিউর আখড়া, আম্বরখানা; শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ জগন্নাথ মণিপুরী মন্দির, শিবগঞ্জ; শ্রীশ্রী নৃসিংহ জিউর আখড়া, কালীঘাট; শ্রীশ্রী গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু জিউর মন্দির, রাজবাড়ী, মির্জাজাঙ্গাল; শ্রীশ্রী জগন্নাথ জিউর আখড়া, নয়াবাজার; আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন); শ্রীশ্রী জগন্নাথ মন্দির, নরসিংটিলা; শ্রীশ্রী জগন্নাথ জিউর আখড়া, কালীঘাট; শ্রীশ্রী মহাপ্রভু মন্দির, নরসিংটিলা; লালদিঘিরপাড় মণিপুরী পাড়া মন্দির পরিচালনা কমিটি; শ্রীশ্রী মহাপ্রভু মন্দির, সাগরদিঘিরপাড়; শ্রীশ্রী গোপীনাথ জিউর আখড়া, মাছিমপুর; শ্রীশ্রী জগন্নাথ মন্দির, বড়বাজার; শ্রীশ্রী জগন্নাথ জিউর আখড়া, সুবিদবাজার; শ্রীশ্রী মহাপ্রভু জিউর আখড়া, লামাবাজার; শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির, দক্ষিণ কাছ; শ্রীশ্রী জগন্নাথ জিউর আখড়া, জিন্দাবাজার; শ্রীশ্রী ব্রজনাথ জিউর মন্দির, শিবগঞ্জ; নিম্বার্ক আশ্রম, মির্জাজাঙ্গাল; সিলেট দেবালয় রথযাত্রা উদযাপন কমিটি, লামাবাজার ও শ্রীশ্রী মহাপ্রভু আখড়া, পনিটুলা, সিলেট, শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ মন্দির, বহর নোয়াগাঁও, সিলেট ও শ্রীশ্রী মহাপ্রভুর আখড়া, ব্রাহ্মনশাসন, আখালীয়া সিলেট।
আয়োজক কমিটির সভাপতি এল প্রশান্ত সিংহ ও সাধারণ সম্পাদক নৃপেন্দ্র সিংহ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘সিলেটবাসীর প্রাণের এই উৎসব যেন ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে এক ঐক্যের বার্তা দেয়। রথযাত্রা শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি এখন আমাদের সিলেটের সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির প্রতীক।’
আগামী ৫ জুলাই (শনিবার) অনুষ্ঠিত হবে উল্টো রথযাত্রা। সেটিও অনুষ্ঠিত হবে একই উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে এমন আশা আয়োজকদের।