বিশেষ প্রতিবেদক
সিলেটের এক বিএনপির নেতার শেল্টারে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন যুবলীগের ডেভিল সাহান। গেলো বছরের জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় প্রকাশ্যে অস্ত্রধারীদের নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার নেতৃত্ব দেয়ার একাধিক মামলার আসামি তিনি। ৫ আগস্টের আগে পলাতক সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি ও সিলেট মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদারের প্রভাবে সিলেটের পূর্বাঞ্চল এলাকায় দাপিয়ে বেড়াতেন তিনি।
স্থানীয়দের দাবি প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনও তাকে গ্রেফতার করছে না। তারা বলছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ফান্ডিং করেছিলেন এই ডেভিল সাহান। তার দেওয়া টাকায় ছাত্র-জনতা আন্দোলন দমাতে এবং অস্ত্রের যোগান দেওয়া হয়েছিল। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী নেতাদের উপর হামলা ও মামলার স্টিম রোলার চালিয়ে ছিলেন এই ডেভিল সাহান।
সিলেট আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অন্যতম অর্থের যোগানদাতা ডেভিল সাহান কিভাবে এখনও গ্রেফতার এড়িয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন! এই নিয়ে বিএনপি’র তৃণমূল নেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
কে এই ডেভিল সাহান?
তিনি সিলেট নগরীর ২৪নং ওয়ার্ডের পশ্চিম তেররতন এলাকার মৃত ময়না মিয়ার ছেলে সিলেট মহানগর যুবলীগ নেতা সাহান আহমদ। সিলেট শাহপরান (রহ.) থানাধীন তামাবিল রোডের পশ্চিম শিবগঞ্জ নাদিরা ফার্নিচারের সামনে ছাত্র আন্দলোনে হত্যা চেষ্টা মামলাসহ একাধিক মামলায় এজাহারভূক্ত আসামী হিসেবে নাম থাকলেও এখনও আছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তেররতন এলাকার অনেকেই জানান, সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি, সিলেট মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদারের প্রভাব বিস্তারের কারণে পশ্চিম তেররতন এলাকার সাধারণ মানুষ জুলাই-আগস্টের আর্দোলনের সময় তার ভয়ে আতঙ্কে ছিলেন। সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি, সিলেট মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদারের সাথে পাল্লা দিয়ে দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে নগরের বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি, দখল বাণিজ্য, নিয়ন্ত্রণ, পুলিশের ওপর হামলাসহ সব ধরণের অপরাধেই ডেভিল সাহান ছিলেন জড়িত। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কয়েকদিন গা ঢাকা দেন এবং নিজের ফেসবুক আইডিও ডিএকটিভ করেন। এখন তিনি এক বিএনপি নেতার শেল্টারে প্রকাশ্যেই নিজ এলাকাসহ নগরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন!
জানা যায়, সিলেট শাহপরান (রহঃ) থানাধীন তামাবিল রোডের পশ্চিম শিবগঞ্জ নাদিরা ফার্নিচারের সামনে আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় সাহান ও তার ক্যাডার বাহিনী। হামলায় গুলি বর্ষণও হয়। তাদের হামলায় আহত গুরুতর আহত হয়েছিল সওদাগর নামের এক আন্দোলনকারী।
এ ঘটনায় সওদাগর বাদী হয়ে পশ্চিম তেররতন এলাকার ময়না মিয়ার ছেলে সাহান আহমদ সহ অজ্ঞাতনামা ২০০ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেন।
৪ আগস্টে হামলায় আহত একাদিক ব্যক্তি জানান, ছাত্র আন্দলোনের উপর হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসী সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি, সিলেট মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদারের তাদের সাথে ছিলেন সাহান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিবগঞ্জ এলাকায় সংঘর্ষের পূর্ব মুহুর্তে সাহানসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছাত্র-আন্দোলন বিরোধী নানা স্লোগান দেয়। পরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে হামলা ও গুলিবর্ষণ করেন। সেখানে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে দেখা যায় আওয়ামী ক্যাডারদের সাথে সাহানকেও দেখা যায়।
৪ আগস্টের ওই হামলায় আহত এক শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, ওইদিন ছাত্রদের উপর হামলার আমার ছেলেও আহত হয়েছে। কিন্তু আসামিরা এখনো প্রকাশ্যে ঘুরছে। আমি এর উচিত বিচার চাই।
উল্লেখ্য, যুবলীগ নেতা সাহানের বিরুদ্ধে সিলেট শাহপরান (রহ.) থানা, কোতোয়ালি থানাসহ সিলেট বিজ্ঞ আদালতে একাদিক মামলা রয়েছে।
এ বিষয়ে শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেনকে মুঠোফেনে কল দিলে তিনি কল রিসিভ করেন নি।
আগামী পর্বে থাকছে –
কে এই বিএনপি নেতা? যার সেল্টারে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে ডেভিল সাহান, এনিয়ে বিস্তারিত। কিভাবে ডেভিল সাহানকে বাঁচাতে এই বিএনপি নেতা এফিডিবিট করে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার প্রচেষ্টা করছেন?