শনিবার, ০৭ Jun ২০২৫, ০২:৪৯ অপরাহ্ন

নোটিশ
সাইটের সংস্কার কাজ চলছে, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের পাশে থাকার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।
সাউদিয়া সিকিউরিটির ২ কোটি টাকার দুর্নীতি, যুবলীগের রুবেল এখন শ্রমিক দল নেতা

সাউদিয়া সিকিউরিটির ২ কোটি টাকার দুর্নীতি, যুবলীগের রুবেল এখন শ্রমিক দল নেতা

বিশেষ প্রতিবেদক
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জনবল নিয়োগে প্রায় ২ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে ‘সাউদিয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড’ নামক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ৬ মাসের জন্য জনবল নিয়োগের দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠানটি। দায়িত্ব নিয়েই হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে আঁতাত করে এই লেনদেন করেই চলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া উঠেছে। জনবল নিয়োগে প্রতিটি পদের জন্য গুনতে হচ্ছে এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা!

সূত্র জানিয়েছে, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ১০টি পদে ২৬২ জন লোক নিয়োগ করা হবে। জনবল নিয়োগের টেন্ডারটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে টেন্ডার বাগিয়ে নিয়েছে সাউদিয়া সিকিউরিটি সার্ভিস। এই কোম্পানীর মালিক এক সময়ের যুবলীগ নেতা রুবেল আহমদ ও সামছু আহমদ। তাদের নামেই এই দরপত্রটি ইস্যু হয়েছে ও তাদের নামেই লাইসেন্স এবং টাকা কিভাবে লেনদেন হচ্ছে, কে নেপথ্যে এর একটি অডিও রেকর্ড এসেছে নিউজ মিরর এর কাছে। এই কোম্পানীর নেপথ্যে রয়েছেন সিলেট মহানগর কৃষক লীগের এক নেতা। তিনি সবসময়ই আড়ালে থাকেন। দীর্ঘদিন জেল খেটে তিনি আবারও সক্রিয় হয়েছেন। যিনি অতীতেও এই হাসপাতালে রাজত্ব করেছিলেন। এখনও হাসপাতালে তার রাজত্ব চলছে। তিনি এবং এক বহিস্কৃত বিএনপি নেতা মিলে রুবেল আহমদ ও সামছু আহমদকে বর্তমানে শেল্টার দিচ্ছেন। এই টেন্ডারটি পাওয়ার পরই শুরু হয়েছে তাদের নিয়োগ বাণিজ্য। এক সময়ের যুবলীগ নেতা রুবেল আহমদ এখন গোয়াইনঘাটের ৫নং পূর্ব আলীরগাঁও ইউনিয়নের শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। পালাবদলে তিনি টাকার বিনিময়ে পদটি বাগিয়ে নিয়েছেন। এই পদটিও ম্যানেজ করে দিয়েছেন মহানগরের ১১নং ওয়ার্ডের বহিস্কৃত এক বিএনপি নেতা।

রুবেল আহমদ রানা ও তার সহযোগী সামছু আহমদ, তারা দুজন মিলে শহরতলীর তেমুখী এলাকায় একটি অফিস করেছেন। ওই আওয়ামী লীগ নেতার মার্কেটে তাদের অফিস। সেখানে বসেই এই নিয়োগ বাণিজ্য চালিয়েছেন। আর এসবের নেপথ্যে রয়েছেন সিলেট মহানগর কৃষক লীগের এক নেতা এবং সিলেট মহানগরের ১১নং ওয়ার্ডের বহিস্কৃত এক বিএনপি নেতা।

সূত্র আরো জানায়, আউটসোর্সিংয়ের টেন্ডার বিজ্ঞপ্তিতে তৎকালীন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া উল্লেখ করেছিলেন হাসপাতালের পুরাতন স্টাফদের দিয়েই কাজ পরিচালনা করা হবে। এরা সবাই পরিক্ষীত ও দক্ষ স্টাফ। তাছাড়া ১শ জনের মধ্যে ৯০ জন হরিজন সম্প্রদায়ের লোক রাখতে হবে। কিন্তু সাউদিয়া সিকিউরিটি সার্ভিসের দায়িত্বরতরা পরিচালকের সেই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে নিয়োগ বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন!

হরিজন সম্প্রদায়ের লোকদের জনপ্রতি ১ লাখ টাকা করে দেওয়ার কথা বলেন রুবেল আহমদ রানা। তারা টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। পরে তাদেরকে আর পূণরায় নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অথচ হরিজন সম্প্রদায়ের ৪০ জন লোককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো। চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত তাদের মেয়াদ রয়েছে। মেয়াদ থাকা সত্যেও টাকা না দেওয়ায় তাদেরকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আর এসব করেছেন এক সময়ের যুবলীগ নেতা রুবেল আহমদ ও সামছু আহমদ।

আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা গ্রহণ নীতিমালায় রয়েছে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজনের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা। কিন্ত সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্ষেত্রে তা সম্পুর্ণ ভিন্ন।

সিলেট জেলা হরিজন সম্প্রদায়ের সহ-সভাপতি পান্নু লাল জানিয়েছেন, গালফ ও আল আরাফাহ সিকিউরিটি সার্ভিসের মাধ্যমে তৎকালীন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া আমাদের সম্প্রদায়ের ৪০ জন লোককে হাসপাতালে নিয়োগ প্রদান করেন। তখন তারা সবাই সিলেট সিটি কর্পোরেশনে চাকরিতে ছিলো। কিন্তু মেডিকেলের পরিচন্নতার স্বার্থে পরিচালক আমাকে বলেন। পরে আমি এই ৪০জন লোককে সিটি থেকে চাকুরি বাদ দিয়ে হাসপাতালে নিয়োগ করি। তাদের নিয়োগের মেয়াদ রয়েছে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত। কিন্তু সাউদিয়া সিকিউরিটি সার্ভিসের রুবেল ও সামছু আমাদের লোকদের চাকরি থেকে বাতিল করে দিয়েছে। পরে আমি রুবেল ও সামছুর সাথে যোগাযোগ করি তারা আমাকে বলেন টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য।

এরপর আমি ওসমানী মেডিকেলের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তীর সাথে যোগযোগ করি। তিনি আমাকে কোন আশ্বাস না দিয়ে বলেন আমার মেডিকেলের স্টাফদের সুযোগ দিতে পারছি না আর আপনার লোকদের কি ভাবে দিবো?

পান্নু লাল আরও বলেন, আমার এই ৪০ জন লোক চাকরি হারিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তারা সিটি কর্পোরেশনে চাকুরি করে তাদের সংসার ভালোই চলছিলো। কিন্তু ওসমানীতে গিয়ে সিটির চাকুরিও গেছে। এখন এরা অপরাধের সাথে যুক্ত হবে। এদের নিয়ে আমি আমার সম্প্রদায়ের লোকজন চিন্তত। আমরা শিঘ্রই চাকুরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নামবো।

এদিকে গত রোববার হরিজন সম্প্রদায়ের লোকদের জনপ্রতি ১ লাখ টাকা করে নেয়ার জন্য এসেছিলেন রুবেল আহমদসহ কজন। হরিজন সম্প্রদায়ের তোপেরমুখে পরে তিনি কৌশলে তারা পালিয়ে যান।

বিষয়টি জানতে রুবেল আহমদের মুঠোফোনে কল করলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

পালাবদলে ‍যুবলীগ নেতা রুবেল আহমদ কিভাবে হলেন শ্রমিক দল নেতা? আর এসবের নেপথ্যে কে এই সিলেট মহানগর কৃষক লীগ নেতা এবং কে এই সিলেট মহানগরের ১১নং ওয়ার্ডের বহিস্কৃত বিএনপি নেতা? তাদের পরিচয় এবং টাকা লেনদেন বিষয়ে অডিও রেকর্ডের বিস্তারিত আসছে।

শেয়ার দিয়ে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন, ধন্যবাদ।




© All rights reserved © 2012 Newsmirror24.news
Design BY Web Home BD
ThemesBazar-Jowfhowo