বিশেষ প্রতিবেদক
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জনবল নিয়োগে প্রায় ২ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে ‘সাউদিয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড’ এর বিরুদ্ধে। আউটসোর্সিংয়ের ৬ মাসের জন্য জনবল নিয়োগের দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠানটি পরিকল্পনা করছে আগামী ২ বছর চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার। দায়িত্ব নিয়েই হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে আঁতাত করে এই লেনদেন করছেন বলে অভিযোগ উঠে। বিষয়টি আলোচনায় আসলে অনুসন্ধানে নামে নিউজ মিরর। সরেজমিন অনুসন্ধানে গিয়ে পায় সাউদিয়া সিকিউরিটির দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর তথ্য। জনবল নিয়োগে প্রতিটি পদের জন্য এক লাখ থেকে ৮০ হাজার টাকা করে নেয়া হচ্ছে।
দরপত্র অনুযায়ী সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ১০টি পদে ২৬২ জন লোক নিয়োগ করা হবে মাত্র ৬ মাসের জন্য। এই টেন্ডারটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাগিয়ে নিয়েছে সাউদিয়া সিকিউরিটি সার্ভিস। এই কোম্পানীর মালিক এক সময়ের যুবলীগ নেতা রুবেল আহমদ ও যুবলীগ কর্মী সামছু জ্জামান। তাদের নামেই এই দরপত্রটি ইস্যু হয়েছে এবং তাদের নামেই এই প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স। জনবল নিয়োগে এখানে টাকা লেনদেন হচ্ছে। এই কোম্পানীর নেপথ্যে রয়েছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর, সিলেট মহানগর কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিব বাবলুর ছোট ভাই সিলেট মহানগর যুবলীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল খালিক লাভলু। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একচেটিয়া দাপট খাটিয়ে ছিলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর, সিলেট মহানগর কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিব বাবলু। যিনি এখনও জুলাই-আগস্টের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হামলা মামলার আসামী হয়ে বর্তমানে পলাতক। এর আগে দীর্ঘদিন থেকে সাউদিয়া সিকিউরিটি সার্ভিস কোম্পানীর এক সময়ের যুবলীগ নেতা রুবেল আহমদ ও যুবলীগের সামছুজ্জামানকে শেল্টার দিতেন। বর্তমানে তারই ছোটভাই সিলেট মহানগর যুবলীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল খালিক লাভলু যিনি যুবলীগ নেতা রুবেল আহমদ ও সামছুজ্জামানকে শেল্টার দিয়ে বড়ভাইয়ের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। এমনকি জনবল নিয়োগে তারাই করছেন লেনদেন। অনুসন্ধানের প্রথম ধাপে মিলে এসব তথ্য!
এখন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের রাজত্ব চলছে। হাসপাতালের এই টেন্ডারটি পাওয়ার পরই শুরু হয়েছে তাদের নিয়োগ বাণিজ্য। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর, সিলেট মহানগর কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিব বাবলুর ডান হাত হিসেবে পরিচিত রুবেল আহমদ। প্রায় এক যুগের তাদের সম্পর্ক। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাবলুর শেল্টারে নিজেকে হাসপাতাল এলাকায় নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে হাসপাতালে দাপট খাটাতেন। এক সময়ের যুবলীগ নেতা রুবেল আহমদ এখন গোয়াইনঘাটের ৫নং পূর্ব আলীরগাঁও ইউনিয়নের শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। যুবলীগ নেতা রুবেল আহমদ ও সামছুজ্জামান এসএমপির একটি থানায় জুলাই-আগস্টের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি হামলা মামলার আসামী তারা। টাকার বিনিময়ে বাদিকে ম্যানেজ করে বর্তমানে এই মামলা থেকে অব্যাহতি নেয়ার জন্য এফিডেভিট করে রেখেছেন। অনুসন্ধানের ২য় ধাপে মিলে এমন তথ্য!
রুবেল আহমদ ও তার সহযোগী সামছুজ্জামান, তারা দুজন মিলে শহরতলীর তেমুখী এলাকায় একটি অফিস করেছেন। এখানেই কাঁচা টাকার খেলা! এই অফিসটির মালিক সিলেট মহানগর যুবলীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল খালিক লাভলু। সেখানে বসেই এই নিয়োগ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। দরপত্র অনুযায়ী সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ১০টি পদে ২৬২ জন লোক নিয়োগ করা হবে মাত্র ৬ মাসের জন্য। চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত তাদের মেয়াদ রয়েছে। তবে যুবলীগ নেতা রুবেল আহমদ, সামছুজ্জামান, প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার জসিম ও সিলেট মহানগর যুবলীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল খালিক লাভলু মিলে দরপত্রের ৬ মাসের পরিবর্তে মেয়াদ ২ বছর পর্যন্ত নেবেন বলে পরিকল্পনা করেছেন। এসবের অন্তরালে রয়েছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর, সিলেট মহানগর কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিব বাবলু। তিনি তাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। এছাড়াও সিলেট বিএনপির কয়েকজন এবং বিশিষ্ট কজন গণমাধ্যম কর্মীর রিকোয়েস্টে জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অনুসন্ধানের ৩য় ধাপে মিলে এই তথ্য!
আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা গ্রহণ নীতিমালায় রয়েছে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজনের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা। কিন্ত সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্ষেত্রে তা সম্পুর্ণ ভিন্ন। মেয়াদ থাকা সত্যেও টাকা না দেওয়ায় চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে অনেককে। আর এসব করেছেন যুবলীগ নেতা রুবেল আহমদ, সামছুজ্জামান ও প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার জসিম। আউটসোর্সিংয়ের টেন্ডার বিজ্ঞপ্তিতে তৎকালীন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া উল্লেখ করেছিলেন হাসপাতালের পুরাতন স্টাফদের দিয়েই কাজ পরিচালনা করা হবে। এরা সবাই পরিক্ষীত এবং দক্ষ স্টাফ। তাছাড়া ১শ জনের মধ্যে ৯০ জন হরিজন সম্প্রদায়ের লোক রাখতে হবে। কিন্তু সাউদিয়া সিকিউরিটি সার্ভিসের দায়িত্বরতরা পরিচালকের সেই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে নিয়োগ বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন!
সূত্র জানায়, হরিজন সম্প্রদায়ের ৪০ জন লোককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছিলো প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত তাদের মেয়াদ রয়েছে। মেয়াদ থাকা সত্যেও টাকা না দেওয়ায় তাদেরকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার জসিম, যিনি নিয়োগকৃত লোকদের কাজ বন্টন করেন। হরিজন সম্প্রদায়ের লোকদের তিনি জনপ্রতি ১ লাখ টাকা করে দেওয়ার কথা বলেন! তারা টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে তাদেরকে আর পূণরায় নিয়োগ দেওয়া হয়নি। আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা গ্রহণ নীতিমালায় রয়েছে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজনের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা। কিন্ত সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্ষেত্রে তা সম্পুর্ণ ভিন্ন।
এর আগে গালফ ও আল আরাফাহ সিকিউরিটি সার্ভিসের মাধ্যমে তৎকালীন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়ার মাধ্যমে এই সম্প্রদায়ের ৪০ জন লোককে হাসপাতালে নিয়োগ প্রদান করেন। তখন তারা সবাই সিলেট সিটি কর্পোরেশনে চাকরিতে ছিলো। এই ৪০জন লোককে সিটি থেকে চাকুরি বাদ দিয়ে হাসপাতালে যোগ দেয়। তাদের নিয়োগের মেয়াদ রয়েছে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত। কিন্তু সাউদিয়া সিকিউরিটি সার্ভিস এই লোকদের চাকরি বাতিল করে দেয়। হরিজন সম্প্রদায়ের এসব লোকজন জানান, প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার জসিম বলেছে জন প্রতি ১ লাখ টাকা দেয়ার জন্য যুবলীগ নেতা রুবেল আহমদ ও সামছুজ্জামানের কাছে তবেই তারা নিয়োগ পাবে। তাও ২ বছরের জন্য! অথচ দরপত্রে ৬ মাসের মেয়াদ, যার প্রায় সাড়ে ৩ মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে! এমন অভিযোগ যাচ্ছে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরসহ সাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে।
বিষয়টি জানতে সিলেট মহানগর যুবলীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল খালিক লাভলুর মুঠোফোনে কল করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার জসিম জানান, তিনি নিয়োগকৃত লোকদের কাজ বন্টন করেন। এর বেশি কিছুই জানেন না।
জনবল নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে সাউদিয়া সিকিউরিটি সার্ভিস রুবেল আহমদ বলেন, এই প্রতিষ্টানের সিলেটের দায়িত্বে আমরা। একটি পক্ষ আমার এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চক্রান্ত চালাচ্ছে। ওরা এই কাজ পাওয়ার আগে এবং পরে আমাকে কিভাবে কাজ থেকে দুরে রাখা যায় এই চক্রান্ত চলছে। হাসপাতালের কর্মরত থাকা কালে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর, সিলেট মহানগর কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিব বাবলুর সাথে পরিচয় হয়। এই পরিচয় দীর্ঘ এক যুগের। তার ছোটভাই সিলেট মহানগর যুবলীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল খালিক লাভলু সাথেও পরিচয় পারিবারিক। তাই আমাদের যুবলীগ ট্যাগ দেয়া হয়েছে। আমাকে যুবলীগ ক্যাডার এবং প্রতিষ্ঠানের সামছুজ্জামানকে যুবলীগ সদস্য বলে কোতোয়ালী মডেল থানায় জুলাই-আগস্টের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি হামলা মামলায় আসামী করা হয়েছে। মামলার বাদি তার খরচে আমাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য এফিডেভিট করে রেখেছেন।
হরিজন সম্প্রদায় সম্পর্কে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। গত ২৯ মার্চ তাদের সাথে আমি আলোচনা করেছি। আমি ১ ঘন্টা গোপণে তাদের সাথে বৈঠকের ভিডিও করে রেখেছি। ৬ মাস মেয়াদের কাজ। প্রায় ৩ মাস অতিবাহিত হয়েছে। সবাইকে নিয়ে কিভাবে কাজ করা যায় আমরা ভাবছি।
৬ মাস মেয়াদের কাজ, প্রায় ৩ মাস অতিবাহিত হয়েছে বাকি ৩ মাস কিভাবে চালাবেন, নাকি ২ বছর মেয়াদ বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছেন এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি!