নিউজ মিরর ডেস্ক
সিলেট নগরীর জালালাবাদ থানার পাঠানটুলাস্থ করের পাড়া এলাকার আওয়ামী লীগ শীর্ষ দোসর পলাশ দাশ এখনও আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরে। কোন ভাবেই থামছেনা তার দৌড়াত্ত। প্রশাসনের নাকের ডগায় বীরদর্পে সে ঘুরাফেরা করছে।
অভিযোগ রয়েছে, করের পাড় এলাকায় তার নেতৃত্বে চলে বড়ো একটি শীর্ষ সন্ত্রাসী লাঠিয়াল বাহিনী। রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ এলাকায় একসময় তিনি ছিলেন ফার্মেসী কর্মচারী। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে শুরু হয় তার উত্থান। মাত্র সাত বছর ব্যবধানে হয়ে ওঠেন জিরো থেকে কয়েক কোটি টাকার মালিক।
প্রয়াত সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান এবং ৮নং- কাউন্সিলর জগদীশ চন্দ্র দাশের বিশ্বস্থ হয়ে কাজ করে ছিলেন তিনি। একপর্যায় জগদীশের ভাগ্নে বিদ্যুৎকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে স্থানীয় এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী।
নিষিদ্ধকৃত ছাত্রলীগকে সামনের কাতারে রেখে যুবলীগ কর্তাদের দিয়ে তিনি সকল ধরণের অপকর্ম পরিচালনা করতেন। বছরের মধ্যে বেশ কয়েকবার আমোদ প্রমোদ করতে দেশ-বিদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভ্রমণে যাওয়া আসা ছিলো সচরাচর। কৌশলে আওয়ামী লীগের কোন পদ ভাগিয়ে না নিলেও তার দাপুটে চলতো রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গেইটের আশপাশে গড়ে উটা ওষুধ ফার্মেসীগুলো।
ক্ষমতার বলে নামে বেনামে সমিতির নেতৃত্ব দিতেন তিনি নিজেই। নিজের কুকর্ম আড়াল করতে রাগীব রাবেয়া মেডিকেলের গেইটে গড়ে তোলেন মেসার্স গ্লোবাল ফার্মেসি নামে ওষুধের একটি কথিত দোকান। সেখানেই আড্ডা জমতো পুরো সন্ত্রাসী বাহিনীর। সন্ধ্যার পরে চলতো মোটরসাইকেল মোহরা। পতিত সরকারের সামনের সারীতে থেকে চালিয়েছেন বিক্ষোভ মিছিল ও সভা সমাবেশ। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নসাৎ করতেও ব্যয় করেছেন বড়ো অংকের কাড়ি কাড়ি টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ আগষ্টে ছাত্র-জনতা আন্দোলনের তোপের মুখে ফ্যাসিষ্ট হাসিনা পালিয়ে গেলেও এই দুর্বৃত্ত খোলস পাল্টিয়ে ওষুধ ফার্মেসির একজন ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে জনসম্মুখে তোলে ধরার অপচেষ্টা করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেখানকার একাধিক ওষুধ ফার্মেসির মালিক জানিয়েছেন, পলাশের নেতৃত্বে একদল যুবলীগ ক্যাডার বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে প্রকাশ্যে দিবালোকে চাঁদা উত্তোলণ করতো। সম্প্রতি সময়ে এসেও জাতীয়তাবাদি দল বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলতে তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের দিয়ে চাঁদা আদায় বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে।
অনুসন্ধ্যানে একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এর সত্যতা মিলেছে। এর ভিডিও ফুটেজ প্রতিবেদকের হাতে সংরক্ষিত রয়েছে। ওরা সকলেই পলাশ দাশের নেতৃত্বে করের পাড় এলাকায় এই চাঁদা উত্তোলণ করতো। চাঁদার ভাগবাটোয়ারার বড়ো একটি অংশ চলে যেতো কাউন্সিলর জগদীশের পকেটে যেতো। অবশিষ্ট চাঁদা কাউন্সিলরের ভাগনা বিদ্যুৎ ও সে নিজে হাতিয়ে নিত। এভাবেই অল্প দিনে সে হয়ে উটে জিরো থেকে কোটিপতি। বর্তমানে সদরের জালালাবাদ থানা এলাকার করের পাড়া মোহনা বি/৭৫ দেব বাড়ি পাঁচ তলা বিশিষ্ট একটি বিলাসবহুল ঘর তৈরী করে বসবাস করছেন। তার স্থায়ী ঠিকানা সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুরে হলেও ডালপালা গজিয়েছেন করের পাড়। রহস্যজনক হলেও সত্য যে, খুন গুম ও প্রাণনাশের ভয়ে স্থানীয় এলাকায় কেউ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পায়না। এমনকি হামলা মামলার ভয়ে অনেক সংবাদকর্মীরাও সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকেন।
এদিকে বিশ্বস্থ্ একটি সূত্র জানিয়েছে, সিলেট নগরীর একাধিক শীর্ষ স্থানীয় পলাতক নেতাকর্মীর সঙ্গে গোপন যোগাযোগ স্থাপন করে যাচ্ছে পলাশ। পলাতক কয়েকজনের বিশাল অংকের অর্থকড়ি তার হেফাজতে রয়েছে। ভারতেও পলাতক কয়েকজনের সঙ্গে রয়েছে তার যোগাযোগ। মুঠোফোনে কারো সাথে কথা বলতে রাজি নহে। তবে হোয়াটসঅ্যাপে অনর্গল কথা ভাগাভাগি করতে দ্বিধাবোধ করেন না। এখন তিনি দেশে আওয়ামী লীগ দলীয় ফ্যাসিষ্টদের সোচ্চার রাখতে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
ওই সূত্রটি আরও জানায়, ফ্যাসিষ্টদের আড়ালে রেখে নিজেকে ব্যবসায়ী সাজিয়ে কতিপয় বিএনপিপন্থি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার অপচেষ্টায় লিপ্ত।
এবিষয়ে পলাশের মুঠোফোনে কথা বললে তিনি বলেন, আমি বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান, কাউন্সিলর জগদীশ ও তার ভাগনা বিদ্যুৎকে চিনিনা। বিদেশ ভ্রমন সম্পর্কে তিনি বলেন, হ্যা আমি বেশ কয়েকবার বিদেশ ভ্রমণ করেছি। ভারতেও গিয়েছি ২/৩বার আমার চিকিৎসার জন্য। আমি কোন দলের নেতা বা কর্মী নহে। ব্যবসার খাতিরে অনেকের সাথে আমার ছবি থাকতে পারে এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। তিনি বলেন, কোন মিছিল সভা সমাবেশে আমি অংশগ্রহণ করিনি।