বিশেষ প্রতিবেদক
সিলেট নগরের কালিঘাটের (মসলাপট্টি কারখানা ঘাট) এলাকায় প্রকাশ্যে চলছে মেলা মিজানের জুয়ার আসর। তবে অদৃশ্য কারণে এই জুয়ার আসর বন্ধে প্রশাসনের নেই কোন প্রদক্ষেপ। অভিযোগ উঠেছে এসএমপির কোতোয়ালি থানার কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা ও কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার নির্দেশে চলছে এই জুয়ার আসর। দিনে চলছে তীর শিলং রাতে চলছে নাইট শিলং, লটারি ও তিন পাত্তিসহ নানান রকমের জুয়া। এই জুয়া বোর্ড বন্ধ না হওয়ায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নও উঠেছে জনমনে। সচেতন মহলের অভিযোগ মেলা মিজানের জুয়া আয়োজনের সাথে স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকার কিছু নেতা সরাসরি সম্পৃক্ত। এসএমপির কোতোয়ালি থানা থেকে ২ মিনিটের দুরত্বে এই জুয়ার আসর। স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে এই জুয়ার আসর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেলা মিজানের জুয়ার আসর পরিচালনা করছেন বর্তমান প্রভাবশালী কিছু নেতা এবং কোতোয়ালি থানার সোর্স পরিচয় দান কারি সানি। বিগত সরকারের সময় আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতারা জুয়ার বোর্ড থেকে সাপ্তাহিক চাঁদা নিয়ে জুয়ার বোর্ডকে দলীয় অনুমোদন দিয়েছিলেন যার ফলে প্রশাসন ছিল নীরব। সেই ধারাবাহিকতায় চলছে মেলা মিজানের জুয়ার আসর। ৫ আগস্টের পর মেলা মিজান আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
কে এই মেলা মিজান?
এক সময়ে সিলেট নগরের রথ, সুরমা মার্কেটের ২য় তলায় তিন পাত্তি, বিভিন্ন মেলায় সে লটারি এবং জুয়ার আসর বসাতো। সেই থেকে তার নাম পরে যায় মেলা মিজান। এর আগে এই জুয়ার বোর্ড চালাতো সিলেটের আলোচিত জুয়াড়ি সাইফুল। পরে এসএমপির কোতোয়ালী থানা ও ডিবি পুলিশের অভিযানে তা ভেঙে দেয়া হয়। পরে ৫ আগস্টের পর মেলা মিজান কৌশলে কালিঘাটের (মসলাপট্রি কারখানা ঘাটে) এই জুয়ার বোর্ডের দায়িত্ব নেয়। বর্তমানে মেলা মিজানের নেতৃত্বে চলছে রমরমা এই জুয়ার আসর। মেলঅ মিজান সেখানে ছোট্ট একটা ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে চালিয়ে যাচ্ছে জুয়ার আসর। একদিকে চলে তীর শিলং খেলা, অন্যদিকে চলে অন্যান্য জুয়া খেলা। তাছাড়া রাত হলে হৈ হুল্লোড়। বুধবার রাতে মেলা মিজান নিজেই জুয়ার বোর্ডের খাতার হিসেব করেন। গোল বৃত্তে সেই মেলা মিজান।
সূত্র জানায়, প্রতিদিন দুপুর থেকে জুয়ার আসর শুরু হয় যা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। কোতোয়ালি থানার সোর্স পরিচয় দান কারি সানি গলির মুখে দাড়িয়ে বোর্ডের তদারকি করে। মেলা মিজানের জুয়ার আসরে জুয়া খেলায় অংশ নেয় অনেক যুবক, কিশোর, বৃদ্ধ, শ্রমিকরা। এই এলাকায় অনেক দোকান ও কল-কারখানা থাকার সুবাদে লেবার, ভ্যানগাড়ী, ড্রাইভারসহ অনেকেই জুয়ার আসরে যান। যে কারনে তাদের কাছ থেকে প্রতিদিন লাখ-লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে শীর্ষ এই জোয়াড়ী মেলা মিজান। সন্ধ্যা হলেই হুমড়ি খেয়ে জুয়াড়িরা যায় মেলা মিজানের জুয়ার আসরে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই এলাকার কিছু লোক লোভের ফাঁদে পা দিয়ে জুয়ার বোর্ডে টাকা হেরে নিঃস্ব আজ। এসবের কারণে অত্র এলাকার যুবসমাজ বিপদগামী ও নৈতিক অবক্ষয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। একটি স্বার্থন্বেষী মহল জুয়ার আসর বসিয়ে সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। তাদের অভিযোগ, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন লোক দেখানো অভিযান চালায়, পুলিশ যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার শুরু হয়ে যায় জুয়ার আসর। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করলে নানান ভাবে তাদের হয়ানির শিকার হতে হয়। যে কারণে ভয়ে তারা কোনো অভিযোগ করছেন না। তারা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
অতীতে এই জায়গায় সাইফুলের জুয়ার আসর বসতো, এসএমপির কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিয়াউল হক দায়িত্বে আসার পর এই জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে এই জুয়ার আসরটি ভেঙে ফেলেন। পরে আবার কৌশলে সোর্স সানির শেল্টারে মেলা মিজান এই জুয়ার আসর বসিয়েছে।
জুয়ার আসর প্রসঙ্গে মেলা মিজানকে জিজ্ঞেস করলে তিনি দাপটের সাথে প্রতিবেদককে বলেন, কোনোকিছুই লিখে লাভ হবে না। আমরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এসব করছি। এরচেয়ে ভালো, আপনিও আমাদের পাশে থাকুন। নিজেও লাভোবান হোন! সানি আপনাকে কল করবে!
বিষয়টি জানতে এসএমপির কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিয়াউল হককে একাধিকবার কল করলে তার মুঠোফোন ব্যস্ত থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।।