বিশেষ প্রতিবেদক
সিলেটে জুলাই ছাত্র জনতা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর চড়াও হওয়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক হেভিওয়েট নেতা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিনি তার অতীতের ক্ষমতার দাপট এখনও এলাকায় দেখাচ্ছেন। তার এই দাপট এবং প্রকাশ্যে চলাফেরায় আতঙ্কে আছেন এলাকাবাসী। তার এই দিব্যি ঘোরাফেরা প্রশ্নবিদ্ধ করছে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের। অনেকেই বলছেন, এই ডেভিল প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলাফেরা করছে! তবে পুলিশ বলছে তাকে গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এই নেতার বিরুদ্ধে সিলেট সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে জুলাই ছাত্র জনতা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর চড়াও এবং হামলা চালানোর একাধিক মামলা রয়েছে। আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আন্দোলনরত ছাত্ররা তা ফেসবুকে প্রচারও করে। তিনি আওয়ামী লীগের ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদ বানিয়েছেন। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নিজ এলাকায় গড়েছেন অবৈধ সিএনজি অটো স্ট্যান্ড। তার সরকারের আমলে করেছেন পুলিশ টোকেন বানিজ্য! এছাড়া, কুমারগাঁও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের অকেজো মালামাল চুরিরও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
তিনি সিলেট সদর উপজেলার টুকের বাজার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ১নং ওয়ার্ডের (মেম্বার) আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন। গিয়াস উদ্দিন সিলেটর নগরীর ৩৮নং ওয়ার্ড শেখপাড়া এলাকার রিয়াজ উল্লাহর ছেলে। সিলেট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও টুকের বাজার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমেদ এবং কান্দিগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নিজাম উদ্দিনের ডান হাত এবং ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত। আশফাক আহমেদের সব অপকর্মের টাকা লেনদেন হত তারই মাধ্যমে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ছাত্র জনতার আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ছাত্র জনতাকে দমাতে গিয়াস সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের উপর চড়াও হয়েছিলেন। ওই সময়ে এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হয়। যেখানে গিয়াস উদ্দিন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গালিগালাজ ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং হুমকি দেন।
গিয়াস সম্পর্কে জানা গেছে, তিনি একসময় কর্মহীন বেকার ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন গিয়াস আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। পরিচয় হয় আশফাক আহমেদের সাথে। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আশফাক ও নিজাম উদ্দিন এর মদদপুষ্ট হয়ে বেপরোয়া কর্মকান্ড শুরু করেন। নেতাদের প্রত্যক্ষ মদদে দলীয় পদ বাগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি টুকের বাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই দুই বার অংশ গ্রহণ করে সদস্য হয়ে যান। নিজের একটি লাঠিয়াল বাহিনীও তৈরী করেন। পুরনো চতুরতার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে বনে যান কোটিপতি। পলাতক সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের ইন্ধন ও সহযোগিতায় গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৩৮নং ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন গিয়াস।
ছাত্র জনতার গনঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় নেতা কর্মীরা, কিন্তু এখনও সদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের গিয়াস। এনিয়ে উপজেলা জুড়ে সমালোচনা চলছে। পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারি সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন এলাকাবাসী।
সরকারের এক বিশেষ সংস্থাও নেমেছে গিয়াসের খোঁজে। আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিনের মুঠোফোন বন্ধ। তাই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
গিয়াসকে ধরতে একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করেছে এসএমপির জালালাবাদ থানা পুলিশ। তার বিরুদ্ধে জালালাবাদ থানায় একটি মামলা রয়েছে। থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হারুনুর রশীদ বিষয়টি জানিয়েছেন।