শুক্রবার, ০৬ Jun ২০২৫, ০৮:৫৩ পূর্বাহ্ন

নোটিশ
সাইটের সংস্কার কাজ চলছে, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের পাশে থাকার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।
ওয়ানটেড সুহেল : সিলেট বিএনপি-জামায়াতের আতঙ্ক

ওয়ানটেড সুহেল : সিলেট বিএনপি-জামায়াতের আতঙ্ক

ইনসেটে - ১ম ছবি এবং লাল বৃত্তে শেখ আলী আশরাফ সুহেল। ২য় ছবিতে ভিডিও থেকে নেয়া আলিম উদ্দিনকে অপহরণের একটি দৃশ্য।

বিশেষ প্রতিবেদক
শেখ আলী আশরাফ সুহেল। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সিলেট বিএনপি-জামায়াতের আতঙ্ক হিসেবে পরিচিত এক ডেভিল। ছিলেন সিলেট জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি এবং সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহার কাশ্মীর গ্রুপের অস্ত্রধারী ক্যাডার। সেই ক্ষমতায় অপহরন, মাদক ব্যবসা, জায়গা দখল, বালু-পাথর লুট, ভারতীয় চোরাচালান লুট, সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে হামলা, সিলেট বিআরটিএ’তে চাঁদাবাজি, গরুর গাড়ি লুটপাট, দেহ ব্যবসা, থানায় দালালি, জুয়া এমন কোনো অপকর্ম তিনি করেন নি! এসব অপকর্ম করে হয়েছেন কয়েক কোটি টাকার মালিক।

শেখ আলী আশরাফ সুহেল সিলেটের বিভিন্নস্থানে কাশ্মীর গ্রুপের হয়ে বিদেশি অস্ত্র নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার উপর হামলা করে। সুহেল এসব ঘটনার ৬টি মামলার এজাহারভুক্ত অন্যতম আসামি। এছাড়া দক্ষিন সুরমা থানায় আরো ৪টি মামলা ২টি অপহরণ ও ১টি চাঁদাবাজি এবং ১টি নারী কেলেঙ্কারি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী।

জানা গেছে, শেখ আলী আশরাফ সুহেল দক্ষিণ সুরমার সুরিগাউ বলদি এলাকার আজম আলীর ছেলে। কিশোর বয়স থেকেই সুহেল ছিলো বেপরোয়া। তার এই বেপরোয়া চলাফেরা কারণে তার বাবা তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। পরে তার ঠাই হয় নানার বাড়ি সিলাম ইউনিয়নের মুল্লারচকে। সেখান থেকেই সুহেল আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ সংগটন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পরে। যোগদান করে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহার কাশ্মীর গ্রুপে। এরপর থেকে তাকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হবার পর পর্যায়ক্রমে বনে যান সিলেট জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি। সেই থেকে একের পর এক ঘটনার জন্ম দেন তিনি। নিজের একটি লাঠিয়াল বাহিনী তৈরী করেন। সেই বাহিনীকে নিয়ে রাত হলে তার কাজ ছিলো অপহরন, মাদক ব্যবসা, জায়গা দখল, বালু-পাথর লুট, ভারতীয় চোরাচালান লুট, চাঁদাবাজি, হামলা, গরুর গাড়ি লুটপাট, অস্ত্র ব্যবসা, দেহ ব্যবসা, থানায় দালালি এবং জুয়া।

সুহেলের এসব অপকর্মের কিছু ভিডিও ফুটেজ এসেছে নিউজ মিরর এর কাছে। প্রয়োজনে তাও প্রকাশ করা হবে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী সরকারের ক্ষমতাকালে সুহেলের দেহ-ব‍্যবসা চলতো সুরমা বোডিং, হোটেল সুফিয়া, হোটেল তায়েফ, লালদিঘির পাড়ের ব‍্য‍াচলর বোডিং, লেইছ হোটেলে। এসব হোটেলেই চলতো তার মাদক ব‍্যবসা। এছাড়া সে তার লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে আওয়ামী লীগ সকারের আমলে কাশ্মীর গ্রুপের আরেক নেতার নগরীর দরগা গেইটস্থ হোটেল আর্কিডে জাফলংয়ের পাথর ব্যবসায়ীদের অপহরণ করে এনে করতো নির্যাতন এবং আদায় করতো মোটা অংকের মুক্তিপণ! অপহরণের পর তাদের ভিডিও করে রাখতো সুহেল।সেই সময়ে তার দেহে একটি বিদেশি রিভলভার এবং তার গাড়িতে দেশিও অস্ত্র থাকতো। প্রতি রাতে তার লাঠিয়াল বাহিনীকে নিয়ে জাফলং রোডে ভারত থেকে আসা অবৈধ পণ্যের গাড়ি আটক করে চাঁদা আদায় করতো। কেউ চাঁদা দিতে অপারগতা কররে তাদের পুরো গাড়িটাই হজম করে নিতো সুহেল বাহিনী। তুহিন নামক এক যুবলীগ কর্মীকে দিয়ে সিলেট বিআরটিএ’তে চাঁদাবাজি করাতো সুহেল।

এসব বিষয়ে কাশ্মীর গ্রুপের এক কর্মী মুকিত প্রতিবাদ করায় তাকে তাদের সরকারের আমলে ৪টি মামলায় ফাঁসায় এই সুহেল। এসব মামলায় পরে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয় মুকিত। সুহেলের এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করতেন না সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং কাশ্মীর গ্রুপের প্রধান বিধান কুমার সাহা। কারণ রাত পোহালে তার কাছে পৌছে যেতো মোটা অংকের টাকার একটি অংশ।

২০১২ সালে রেলের টিকিট দালালি নিয়ে শেখ আলী আশরাফ সুহেল ও তার দলবল সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের হামলা ও ভাঙ্চুর করে। এঘটনায় রেলের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে রেলওয়ে পুলিশের (জিআরপি) সিলেট থানায় একটি মামলা করেন। এই ঘটনায় শেখ আলী আশরাফ সুহেলকে প্রধান আসামী করে অজ্ঞাতনামা দেড়শ’ জনকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।

সিলেট মহানগর বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী সরকারের ক্ষমতাকালে সুহেল বিএনপি এবং জামায়াতের লোকদের অবস্থান সম্পর্কে আওয়ামী পুলিশদের জানাতো। রাতের আঁধারে দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন নেতাকর্মীদের পুলিশ নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করাতো। এছাড়াও এসব গ্রেফতারকৃত নেতা কর্মীদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনতো। ২০১৪ সালে বিএনপি-জামাতকে যখন স্বৈরাচার হাসিনা সরকার নির্মূল করতে নামে তখন এই সুহেল ছিলো অন‍্যতম অস্ত্রধারী ক্যাডার। সেই সময়ে রিকাবীবাজারের বনুফল তার নেতৃত্বে লুটপাট করা হয় এবং ছাত্রদল ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মীদের ওপর বর্বর হামলা করার জন্য তৎকালীন হাসিনা সরকার তাকে ৫০ হাজার টাকাও পুরস্কার হিসেবে দেয়! তার এত ক্ষমতা ছিলো যে, একই বছর ২০১৪ সালে নগরীর কোর্ট পয়েন্টে সুরমা মার্কেটের সামনে একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট তার মোটরসাইকেল আটকানোর কারণে সে সেই ট্রাফিক সার্জেন্টকে মেরে হাসপাতালে পাঠায়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সিলেট বিএনপি-জামাতের আতঙ্ক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলো সে।

সিলেট জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি এবং সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহার কাশ্মীর গ্রুপের নেতৃত্ব দানকারী হওয়ার সুবাদে তার চাঁদাবাজির যন্ত্ররায় অতিষ্ঠ ছিলো কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জাফলংয়ের মানুষ। সেই সময়ে প্রতিদিন পাথর কোয়ারি এবং বালু মহালে শ্রমিক লীগের সমেদ ও জাফলং বিএনপি নেতা মজির উদ্দিন এবং শেখ আলী আশরাফ সুহেল তার লাঠিয়াল বাহিনীরা লুটপাট ও চাঁদাবাজি করে মোটা অংকের কাঁচা টাকা এনে বাটবাটোয়ারা করতো নগরীর দরগা গেইটস্থ হোটেল আর্কিডে।

সুহেল ২০১৮ সালে জাফলং নয়া বস্তির পাথর ব্যবসায়ী আলিম উদ্দিনকে অপহরণ করে এবং তার কাছ থেকে নগদ মুক্তিপণ ও জায়গা লিখে নেয় তার নামে। ৫ আগস্টের পরে আওয়ামী দোসরদের বিদায় হলেও সুহেল এখনো তার তান্ডর বহাল রয়েছে। গেলো কয়েক মাসে প্রায় ৭ কোটি টাকার পাথর উত্তোলন তারা। জাফলংয়ে নয়াবস্তির মানুষের বসত বাড়ি পর্যন্ত ছাড় পায়নি সুহেল-মজির উদ্দিন গংদের হাত থেকে। সুহেল এতো মামলার আসামী, একজন ডেবিল হয়েও কিভাবে এখনও জাফলং থেকে কোটি-কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে এবং কার শেল্টারে এত ক্ষমতা পায় এই প্রশ্ন জাফলংয়ের বাসিন্দাদের।

অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, সুহেল বর্তমানে নগরীর কাস্টঘরের ৩৩ নাম্বার বাড়িটি দখল করে বসবাস করছে। এই বাড়িটি তারই খালু জাসদের প্রবীণ রাজনীতিবিদ কাইয়ুম চৌধুরীর। বর্তমানে সে সেখানে বসবাস করছে। কাইয়ুম চৌধুরীর মারা যাবার পর সুহেল বাড়িটি কৌশলে তার দখলে নিয়ে নেয়। দখলের পর পুরো বাড়িতে সিসি ক্যামেরা লাগায়। এই বাড়ি নিয়ে সুহেলের মামা যুক্তরাজ্য প্রবাসী আলাই মিয়া প্রতিবাদ করায় তাকেও সে হত্যার হুমকি দেয়। এঘটনায় আলাই মিয়া দক্ষিন সুরমা থানায় একটি মামলা করেন কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মামলাটি গিলে ফেলে সুহেল! এসব অপকর্ম করে দুর্নীতির মাধ্যমে সুহেল এখন অঢেল সম্পদের মালিক।

কাস্টঘরের স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, ৩৩ নাম্বার বাড়িতে যে চৌকিদার ছিলো তার স্ত্রী জামালপুরের নদীকে জোর করে আটকে রেখে অবৈধ সম্পর্ক করে সুহেল এবং চৌকিদারকে ভয় দেখিয়ে পালাতে বাধ্য করে। বর্তমানে নদীকে বিয়ে ছাড়া জোর করে সংসার করছে।

নাম প্রকাশ্য অনিচ্ছুক সুহেলের এক আত্মীয় জানান, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহার কাশ্মীর গ্রুপের অস্ত্রধারী ক্যাডার সুহেল। আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকাকালিন সময়ে সে নিজের দেহে অস্ত্র বহন করতো। নিজের মামার কাছেও সে বিল্ডিং বানানোর কারণে চাঁদা দাবি করেছিলো। বিধানের সহযোগীতায় সে আজ কয়েক কোটি টাকার মালিক। এমন কোনো কাজ নেই যে সে করেনি। নামে-বেনামে করেছে সম্পদের পাহাড়। সে ২০২৪ সালে চন্ডিপুল এলাকার কাচা বাজারের আরো একটি মার্কেট দখল করে। দুদক অনুসন্ধান করলে এর সত্যতা পাবে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই ওয়ানটেড সুহেল সিলেটের বিভিন্নস্থানে বিদেশি অস্ত্র নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার উপর হামলা করে। তার দখলকৃত (কাস্টঘরের) বাসায় স্থানীয় এবং সিলেটের পরিচিত নেতা কর্মীদের যাতায়াত। যে কারণে তার বিরুদ্ধে এখনো কেউ কথা বলতে ভয় পায়।

শেয়ার দিয়ে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন, ধন্যবাদ।




© All rights reserved © 2012 Newsmirror24.news
Design BY Web Home BD
ThemesBazar-Jowfhowo