বিশেষ প্রতিবেদক
সিলেটে যুবলীগের শীর্ষ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তানভীর এখনও লাপাত্তা! অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রায় ৯ মাস পাড় হলেও এখনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে গ্রেফতার বা তার অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি। নগরীর ৮নং ওয়ার্ড জালালাবাদ থানাধীন করেরপাড়া এলাকার রহিম মিয়ার ছেলে যুবলীগের এই শীর্ষ সন্ত্রাসী তানভীর। নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত হওয়ার আগে এলাকায় ছিনতাইকারী হিসেবে পরিচিত ছিলো বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার উপর হামলার একাধিক মামলার পলাতক আসামী তানভীর। এসএমপির জালালাবাদ থানা ও কোতোয়ালী থানাসহ সিলেটের বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
জানা গেছে, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বিধান কুমার সাহা’র হাত ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পা রাখা তানভীর নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজেল আহমদ তালুকদারের সাথে জুটি গড়ে তোলে। এই দুইয়ে মিলে কালিবাড়ি এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাছির উদ্দিন খাঁনের প্রত্যক্ষ মদদে গঠন করেন বৃহত্তর তেলিহাওর ব্লক ছাত্রলীগ কালিবাড়ি শাখা।
নাছির উদ্দীন খাঁন ও সুজেলের শেল্টারে বেপরোয়া হয়ে ওঠা তানভীর জালালাবাদ, কোতোয়ালি ও এয়ারপোর্ট থানাধীন এলাকায় গড়ে তুলে অপরাধের সাম্রাজ্য। এমন কোন অপকর্ম নেই যা তানভীর করেনি। তার দাপটে আখালিয়া নয়াবাজার, কালিবাড়ি, করেরপাড়া, পাঠানটুলা, মদিনা মার্কেট, বাগবাড়ি, সুবিদ বাজার, বনকলাপাড়া এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে থাকতেন। তার অবৈধ অস্ত্র, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, জমি বাসাবাড়ি দখল, টিলা কাটা, বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করে টমটম চার্জ বানিজ্য গড়ে তোলা তানভীর একসময় গুরু সুজেলকেও ছাড়িয়ে যায়।
ভাগবাটোয়ারার দ্বন্দ্ব দেখা দিলে তানভীর সুজেলের সঙ্গ ত্যাগ করে নিজেই গ্রুপ খুলে বসে। পরে অপরাধের সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজের সাথে যোগ দেন। সেখানে নিজের অবস্থান সুবিধামত করতে না পারায় তার জন্মদিনে দলবল নিয়ে বিশাল শোডাউন করার মাধ্যমে পলাতক সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের গ্রুপে যোগ দেয়।
জুলাই ছাত্র জনতার আন্দোলন দমাতে ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জগদীশ চন্দ্র দাসের অনুসারীদের সাথে অত্যাধুনিক অস্ত্র হাতে মাঠে নামেন তানভীর। ঘনিষ্ঠ সহচর সাগর ও তানভীরের হাতে থাকা অস্ত্রসহ ছবি দেখে তাদের নিশ্চিত করেন কয়েকজন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক করের পাড়া এলাকার একাধিক বাসিন্দা তানভীরের টর্চার সেল থাকার বিষয়টিও বলেন প্রতিবেদককে।
জালালাবাদ থানাধীন বড়গুল এলাকার ইছাক আলী জানান, তানভীর মাদকাসক্ত। তার যন্ত্রনায় এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে থাকতেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অবৈধ অস্ত্র মজুদ, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, জমি বাসাবাড়ি দখল, টিলা কাটাসহ সবকিছুতেই সে সক্রিয় ছিলো।
৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে একাধিক মামলার হয় তানভীরের বিরুদ্ধে। এসব মামলার কারণে সে গা ঢাকা দেয়। তানভীর গা ঢাকা দিলেও তার অনুসারীরা এখনো প্রকাশ্যে কালিবাড়ি করের পাড়া এলাকার ঘুরে বেড়াচ্ছে। গ্রেফতার এড়াতে কয়েক দফা স্থান পরিবর্তন করে সর্বশেষ ঘনিষ্ঠ সহচর সাগরের সাথে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় থাকার কথা বলছেন অনেকে।
তানভীরকে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীরা।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (NCP) উত্তর অঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আসাদুল্লাহ আল গালিফ জানান, জুলাই আন্দোলন আগস্ট পর থেকে আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার কথা বারা বার বলা হচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন লোকজনের তদবিরের কারণে সেটি আলোর মুখ দেখছে না। অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে অস্ত্রধারীদের গ্রেফতার করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান। তিনি যৌথবাহিনির অভিযানকে আরো জোরদার করারও আহবান জানান।
শীর্ষ সন্ত্রাসী তানভিরকে ধরতে একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করেছে এসএমপির জালালাবাদ থানা পুলিশ। থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হারুনুর রশীদ বিষয়টি জানিয়েছেন।