বৃহস্পতিবার, ১২ Jun ২০২৫, ১১:১০ অপরাহ্ন

নোটিশ
সাইটের সংস্কার কাজ চলছে, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের পাশে থাকার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।
জাফলংয়ে নীরবে চলছে চাঁদাবাজি : নৈশপ্রহরীর নামে বছরে প্রায় ২ কোটি টাকা আদায়

জাফলংয়ে নীরবে চলছে চাঁদাবাজি : নৈশপ্রহরীর নামে বছরে প্রায় ২ কোটি টাকা আদায়

পর্যটন স্পটে সোমবার সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত সমিতির সভাপতি হোসেন মিয়া ও আলমগীর হোসেন তার দলবলকে নিয়ে চাঁদা তুলতে দেখা যায়।

বিশেষ প্রতিবেদক
দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র সিলেটের জাফলংয়ে নৈশপ্রহরীর নাম ভাঙ্গিয়ে দীর্ঘদিন থেকে নীরবে চলছে চাঁদাবাজি। বিজিবি ক্যাম্পের পর থেকে জিরো পয়েন্টে যাওয়ার পুরো এলাকা জুড়ে রয়েছে প্রায় সাত শত অস্থায়ী দোকান। সরকারের খাস জমির ওপর এসব অস্থায়ী দোকান বসিয়ে রমরমা ব্যবসা চললেও সেদিকে প্রশাসনের কোনো খেয়ালই নেই। অবৈধ এসব দোকান থেকে নৈশপ্রহরীর (নাইট গার্ড) বেতন বাবদ ৩০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছে পর্যটন ব্যবসায়ী সমিতি নামক একটি সংগঠন। সরকারের পক্ষ থেকে এসব অস্থায়ী দোকানের কোনো অনুমোদন না থাকলেও জাফলং পর্যটন ব্যবসায়ী সমিতি নামক এই সংগঠন এসব দোকান বসার অনুমোতি দিয়েছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন উদ্যোগ নিলে শুধু এসব দোকানপাট থেকে বছরে কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে পারতো। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের নজরদারি ও তদারকির অভাবে জাফলংয়ের এসব অস্থায়ী দোকানপাট থেকে বড় ধরনের আয়ের খাত থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার!

সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, বিজিবির সংগ্রাম ক্যাম্পের নিচ থেকে সিঁড়ি বেয়ে নামার পথে একপাশ দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে অসংখ্য দোকান। নিচে সমতল ভূমিতে কয়েকটি বিশাল মার্কেট। ওপরে শামিয়ানা দিয়ে তৈরি এসব অস্থায়ী দোকান নিয়ন্ত্রণ করে জাফলং পর্যটন ব্যবসায়ী সমিতি।

অস্থায়ী ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, এখানে অস্থায়ী দোকান বসাতে প্রথমে এই সমিতিকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা দিতে হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতি সপ্তাহে নৈশপ্রহরীর বেতন বাবদ প্রতিটি অস্থায়ী দোকান থেকে ২০০ টাকা করে চাঁদা তোলা হত এই সমিতির নামে। বর্তমানে সাপ্তাহিক নৈশপ্রহরীর বেতন বাবদ ৩০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হচ্ছে তাদের। এছাড়াও বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেও তাদের আরো বাড়তি চাঁদা দিতে হয়।

এদিকে, সোমবার অস্থায়ী এসব দোকান থেকে এই সমিতির সভাপতি হোসেন মিয়া ও আলমগীর হোসেন তার দলবলকে নিয়ে চাঁদা তুলতে দেখা যায়। এসময় এক অস্থায়ী ব্যবসায়ী চাঁদা দিতে না পারায় তাকে লাঞ্ছিত করেন তিনি। প্রতিবেদক নিজের পরিচয় দিয়ে বিষয়টি জিজ্ঞেস করলে তিনি তার দলবল নিয়ে সটকে পড়েন।

স্থানীয় একজন গণমাধ্যমকর্মীর তথ্যমতে, এখানে বর্তমানে ৫০০-এর বেশি অস্থায়ী দোকান রয়েছে। কিন্তু এর বাইরে দুশ’র বেশি দোকান রয়েছে জাফলং এলাকা জুড়ে। প্রতিটি দোকানের মালিক ৩০০ টাকা করে সপ্তাহে চাঁদা দিলে ৭০০ দোকান থেকে প্রতি সপ্তাহে দুই লাখ ১০ হাজার টাকা চাঁদা ওঠে। সে হিসেবে ৫২ সপ্তাহ বা এক বছরে এক কোটি ৯২ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয়।

সরকারের খাসজমির ওপর নির্মিত দোকানপাট থেকে বছরে কোটি টাকার বেশি চাঁদা তুললেও তার কোনো তথ্য নেই গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনের কাছে। বছরের পর বছর এই খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা থাকলে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান, প্রতি দোকান থেকে সপ্তাহে ২০০ টাকা করে সমিতিকে চাঁদা দিতে হয়। কিন্তু বছর শেষে বা কমিটির মেয়াদ শেষ হলে এসব টাকার কোনো হদিস পাওয়া যায় না। সাধারণ সভা হলে কিংবা হিসাব-নিকাশ চাওয়া হলে কাকুতি-মিনতি করেও টাকার হিসাব দেওয়া হয় না। সমিতির কয়েকজন নেতার পকেটে সব টাকা চলে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কোনো ব্যয় হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে জাফলং পর্যটন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হোসেন মিয়ার মুঠোফোনে কল করে এসব এসব অভিযোগের বিষয়ে বললে, এই এলাকায় ৬০টি দোকান রয়েছে। এসব দোকান থেকে নৈশপ্রহরীর বেতন তোলা হয়। নৈশপ্রহরীর বেতনের জন্য সপ্তাহে দুই লাখ ১০ হাজার টাকা লাগে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে হোসেন মিয়া বলেন, ‘এসব বিষয়ে কথা বলতে চাইলে জাফলং আসেন, বলে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

স্থানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মী ওই সমিতির চাঁদাবাজি সাথে জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন অস্থায়ী ব্যবসায়ীরা।

প্রতিবেদক চাঁদাবাজির এই বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিলে, গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবের একজন পদধারী সাংবাদিক নেতা প্রতিবেদকের ফেসবুক মেসেঞ্জারে এই সমিতির পক্ষে সাফাই গান। তিনি তার মেসেজ মাধ্যমে জানান- তারা চাঁদাবাজি করে না। এখানকার ব্যবসায়ীদের দোকানপাটের জন্য নিযুক্ত নৈশ্যপ্রহরীর বেতন বাবদ সাপ্তাহিক ১০০, ২০০, ৩০০ হারে দোকান প্রতি দোকানের ইনকাম নির্ভর টাকা তুলে। বিষয়টি গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় পুলিশ, এমনকি জিরো পয়েন্ট এলাকায় নিযুক্ত টুরিস্ট পুলিশও ওয়াকিবহাল। আমরা সাংবাদিক ইচ্ছে করলেই কারো ক্ষতি করতে পারি, উপকার ক’জন করতে পারি?

বিষয়টি জানতে গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলে তা ব্যস্ত দেখায়।

নৈশপ্রহরীর নামে চাঁদা আদায় তোলা হচ্ছে এই বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী। এভাবে কারও চাঁদা তোলারও কথা নয়। এ বিষয়ে তিনি খোঁজ নিবেন। তিনি আরো বলেন-এখানে প্রায় হাজারের মতো দোকান আছে। এগুলো কীভাবে চলবে, কারা ব্যবসা করবেন এটা নিয়ে একটা নীতিমালা খসড়া করা হয়েয়ে। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে। এই নীতিমালার আলোকেই দোকান ভাড়া দেওয়া হবে এবং দোকান থেকে প্রাপ্ত আয় সরকারের কোষাগারে জমা হবে। এগুলো দিয়ে এই জাফলংয়ের পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে।

জাফলংয়ে নীরবে চলছে চাঁদাবাজি! ২য় পর্বে থাকছে আরো বিস্তারিত।

 

শেয়ার দিয়ে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন, ধন্যবাদ।




© All rights reserved © 2012 Newsmirror24.news
Design BY Web Home BD
ThemesBazar-Jowfhowo