বিশেষ প্রতিবেদক
সিলেট নগরের কালিঘাটের (মসলাপট্টি কারখানা ঘাট) এলাকায় একাধিক বার প্রশাসনের অভিযান পরিচালনা করেও কিছুতেই বন্ধ করতে পারছে না পুলিশের সোর্স পরিচয়দানকারি সানি ও নজরুলের জুয়ার বোর্ড। তারা প্রকাশ্যে চালাচ্ছে এই জুয়ার আসর। সম্প্রতি পুলিশ-প্রশাসন সিলেটে জুয়ার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করলেও কালিঘাটের মসলাপট্টি কারখানা ঘাটের এই জুয়ার বোর্ডটি বন্ধ হচ্ছে না অদৃশ্য কারণে।
এলাকাবাসির অভিযোগ, পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে পুলিশের সোর্স পরিচয়দানকারি সানি ও নজরুলের নেতৃত্বে চলছে ভারতীয় তীর শিলং, রাতে নাইট শিলং, লটারি ও তিন পাত্তিসহ নানান রকমের জুয়া। এর ফলে বিপথগামী হচ্ছে এলাকার তরুণ ও যুবকরা। দীর্ঘদিন দিন ধরে এই জায়গায় জুয়ার আসর চললেও প্রশাসন কিছুতেই বন্ধ করতে পারছে না। পুলিশ এখানে অভিযান পরিচালনা করে ঠিকই তবে এই জুয়ার আসরের বোর্ডের আসবাবপত্র রেখে যাওয়ার কারণে পরবর্তীতে জুয়ার বোর্ডের মালিকরা আবার জুয়ার আসর বসায়। বুধবার রাতেও এখানে অভিযান হয়েছে তবে পুলিশ মূলহোতা সানি ও নজরুলকে ধরতে পারেনি। যার কারণে তারা আবার জুয়ার আসর বসিয়েছে। এলাকার সচেতন মহল মনে করছেন যদি দ্রুত এই জুয়ার আসর বন্ধ করা না হয় তাহলে এলাকার তরুণ যুবকরা যেমন অসামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়বে, তেমনি নগরীতে চুরি-ডাকাতি বৃদ্ধি পাবে।
সচেতন মহলের অভিযোগ, পুলিশের সোর্স পরিচয়দানকারি সানি ও নজরুলের সাথে স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকার কিছু নেতা সরাসরি সম্পৃক্ত। এসএমপির কোতোয়ালি মডেল থানা থেকে ৮/৫ মিনিটের দুরত্বে এই জুয়ার আসর। বিগত সরকারের সময় আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতারা জুয়ার বোর্ড থেকে সাপ্তাহিক চাঁদা নিয়ে জুয়ার বোর্ডকে দলীয় অনুমোদন দিয়েছিলেন যার ফলে প্রশাসন ছিল নীরব। সেই ধারাবাহিকতায় চলছে কালিঘাটের মসলাপট্টি কারখানা ঘাটের জুয়ার আসর। পুলিশের সোর্স পরিচয়দানকারি সানি ও নজরুল প্রশাসনের হাতে একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছিলো। অভিযোগ রয়েছে, সোর্স সানির মাধ্যমে থানাপুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের হাতে বখরা পৌঁছে দেয়া হয়। শ্রমিকদের অনেকেই এই খেলার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে কাজকর্মের প্রতি মনোনিবেশ হারিয়ে ফেলেছেন। সারা দিন শুধু এই খেলায় ব্যস্ত থাকেন। এর কারণে দিন দিন তাদের পারিবারিক অস্বচ্ছলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যখন পকেটে টাকা না থাকে তখন অনেকেই তাদের ঘরের আসবাবপত্র বিক্রি করে এসব খেলায় আসেন। আবার কেউ-কেউ চুরি মতো অপরাধমূলক কাজ করতে দ্বিধাবোধ করেন না। ফলে এলাকাবাসী অনেকটাই আতঙ্কগ্রস্ত। এ অবস্থা চলতে থাকলে এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাবে। যেভাবে প্রকাশ্যে এই জুয়ার আসর চলছে, তাতে অভিভাবক মহল তাদের সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন।
একটি সূত্র জানায়, কালিঘাটের মসলাপট্টি কারখানা ঘাটে একসময়ে এই জুয়ার বোর্ড চালাতো সিলেটের আলোচিত জুয়াড়ি সাইফুল। পরে এসএমপির কোতোয়ালী থানা ও ডিবি পুলিশের অভিযানে তা ভেঙে দেয়া হয়। পরে ৫ আগস্টের পর মেলা মিজান নামক এক জুয়াড়ি কৌশলে কালিঘাটের মসলাপট্রি কারখানা ঘাটে এই জুয়ার বোর্ডের দায়িত্ব নেয় মেলা মিজান। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল তাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে ১৫ জানুয়ারী সোমবার এসএমপি’র মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের একটি টিম কালীঘাটস্থ কারখানাঘাট নদীর পাড় অভিযান পরিচালনা করে তাদের মিজানকে গ্রেফতার করে। সেই সময়েও মিজানের জুয়ার বোর্ডের দায়িত্বে ছিলো পুলিশের সোর্স পরিচয়দানকারি সানি। বর্তমানে পুলিশের সোর্স পরিচয়দানকারি সানি ও নজরুলের চলছে রমরমা এই জুয়ার আসর। নদীর পাড়ে ছোট্ট একটি ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে চালিয়ে যাচ্ছে জুয়ার আসর। একদিকে চলে তীর শিলং খেলা, অন্যদিকে চলে অন্যান্য জুয়া খেলা। তাছাড়া রাত হলে হৈ হুল্লোড়তো আছেই।
প্রতিদিন দুপুর থেকে জুয়ার আসর শুরু হয় যা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। সানি ও নজরুল তারা গলির মুখে দাড়িয়ে বোর্ডের তদারকি করে। এই জুয়ার আসরে জুয়া খেলায় অংশ নেয় অনেক যুবক, কিশোর, বৃদ্ধ, শ্রমিকরা। এই এলাকায় অনেক দোকান ও কল-কারখানা থাকার সুবাদে লেবার, ভ্যানগাড়ী, ড্রাইভারসহ অনেকেই জুয়ার আসরে যান। যে কারনে তাদের কাছ থেকে প্রতিদিন লাখ-লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে শীর্ষ এই জোয়াড়ীরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই এলাকার কিছু লোক লোভের ফাঁদে পা দিয়ে জুয়ার বোর্ডে টাকা হেরে নিঃস্ব আজ। এসবের কারণে অত্র এলাকার যুবসমাজ বিপদগামী ও নৈতিক অবক্ষয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। একটি স্বার্থন্বেষী মহল জুয়ার আসর বসিয়ে সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। তাদের অভিযোগ, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন লোক দেখানো অভিযান চালায়, পুলিশ যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার শুরু হয়ে যায় জুয়ার আসর। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করলে নানান ভাবে তাদের হয়ানির শিকার হতে হয়। যে কারণে ভয়ে তারা কোনো অভিযোগ করছেন না। তারা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
এসএমপির কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিয়াউল হক দায়িত্বে আসার পর এই জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে এই জুয়ার আসরটি ভেঙে ফেলেন। পরে আবার কৌশলে সোর্স সানির শেল্টারে নজরুল এই জুয়ার আসর বসিয়েছে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, পুলিশের অভিযানে এখানে কিছুই হবে না, গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করলে মূলহোতা সানি ও নজরুল গ্রেফাতার হবে। তারা জুয়ার আসরের আসবাবপত্রও নিয়ে যাবে, এই জুপড়িও ভাঙবে।
জুয়ার আসর প্রসঙ্গে নজরুল জানায়, আমরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এসব করছি। আমাদের বোর্ড পুলিশ কখনই ভাঙবে না। এরচেয়ে ভালো, আপনিও আমাদের পাশে থাকুন। গতকাল বুধবার রাতে পুলিশ আসার আগেই আমরা খবর পেয়েছি, তাই সড়ে গিয়েছিলাম।
এ বিষয়ে এসএমপির কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিয়াউল হক বলেন, এই এলাকায় জুয়ার বোর্ডে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা যখনই খবর পাই, অভিযান পরিচালনা করি। সম্প্রতি এই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে একাধিক জুয়াড়িদের গ্রেফতার করা হয়েছে। কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে যারা এসব করছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।