নিউজ মিরর ডেস্ক
আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ইমরানের প্রভাব খাটিয়ে চলা স্বপ্নীল কনস্ট্রাকশনের ঠিকাদার এখনো বহাল তবিয়তে। খাল খননের নামে হাজার হাজার একর ফসলী জমি নষ্ট করে চলেছেন। এতে হুমকির মুখে পড়েছে শত শত ঘরবাড়ি।

খাল খননের নামে হাজার হাজার একর বোরো ধান চাষের ভূমির মাটি কেটে নেওয়ার প্রতিবাদ করায় উল্টো স্থানীয় লোকজনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে হয়রানী করছেন তামিম নামে স্বপ্নীল কনস্ট্রাকশনের ঠিকাদার।এই মামলায় আসামি হয়ে স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীরাও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

এই ঘটনায় ফুসে ওঠেছেন গোয়াইনঘাট উপজেলার ৯নং ডৌবাড়ি ইউনিয়নের ছয় মৌজার লোকজন। স্থানীয় লোকজনকে মামলা দিয়ে ফাঁসানোর ঘটনায় দাঙা হাঙ্গামা, রক্তপাতের উদ্রেক হয়েছে। যে কোনো মুহুর্তে বড় ধরণের সহিংসতার ঘটনা ঘটতে পারে।

ইতিমধ্যে গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় নিহাইন এলাকাবাসীর উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঘটনার প্রতিকারে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিলেট জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গোয়াইনঘাট উপজেলার ৯নং ডৌবাড়ি ইউনিয়নের তুরাইল বিল থেকে গোয়াইন নদী পর্যন্ত কেন্ডার খাল খনন করছে স্বপ্নীল কনস্ট্রাকশন। ২০২৪ সালের মে/জুন মাসে টেন্ডার ও কাজের অনুমতি পায় প্রতিষ্ঠানটি। আওয়ামী লীগের ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার সিলেট-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ওমন্ত্রী ইমরান আহমদকে দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে অযৌক্তিকভাবে টেন্ডার করিয়ে কাজটি বাগিয়ে নিয়ে পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেন। গত জুলাই-আগস্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের পর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিসহ নেতাকর্মীরা পালিয়ে গেলেও বহাল থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন স্বপ্নীল কনস্ট্রাকশনের ওই ঠিকাদার। অযৌক্তিক টেন্ডার দিয়ে খাল খনন করার নামে কৃষি জমির মাটি কেটে নিচ্ছেন ওই ঠিকাদার। কেবল কৃষি জমি নয়, এতে করে ভাঙনের ঝুঁকির মুখে পড়েছে ঘরবাড়ি। এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ইমরানের পোষ্য ঠিকাদার এলাকার লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, কেন্ডা বিলের চারপাশে কৃষি ক্ষেত ও গো-চারণ ভূমি এবং সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা স্থানীয় ছয় মৌজার বাসিন্দারা সরেজমিন গিয়ে কাজ বন্ধ করতে গিয়ে দেখেন, এক্সেভেটর মেশিন দিয়ে খাল খননের নামে কৃষি জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয়রা বাধা দিলে ঠিকাদার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে হুমকি দেন। স্থানীয়দের কথায় কর্ণপাত না করে মাটি কাটা অব্যাহত রাখেন।

এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর সিলেটের জেলা প্র্রশাসক, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে পৃথকভাবে লিখিত আবেদন করেন ওই ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার লোকজন।

স্থানীয়দের দাবি, এহেন অবস্থায় এলাকায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও রক্তপাত হওয়ার উপক্রম হয়েছে।সোচ্ছার হয়ে ওঠেছেন স্থানীয় নিহাইন গ্রামবাসী। হাজার একর বোরো ফসল রক্ষা ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ছয় মৌজার লোকজন।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় নিহাইনবাজারে আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় বক্তারা কেন্ডাখাল খননের প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তারা বলেন, কেন্ডা খাল খননের নামে গোপন একটি প্রকল্পে দেওয়া হয়েছে। এটা বন্ধ না করলে হাজার হাজার একর বোরো ফসল ও ঘরবাড়ি, গো-চারণভূমিও ধ্বংস করা হচ্ছে। এছাড়া এলাকার মানুষের ঐক্যের বিরুদ্ধে গিয়ে কুচক্রীমহল খাল খননের নামে কৃষি জমি ও গো-চারন ভূমি ধ্বংস করছে। এটা সাধারণ মানুষের অস্তিত্বে আঘাত করা হচ্ছে। তাছাড়া ঘটনার প্রতিবাদ করায় মামলা দিয়ে স্থানীয় লোকজনকে আরো ফুসিয়ে তুলেছেন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী ঠিকাদার।