বিশেষ প্রতিবেদক
অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতি ও একজন আওয়ামী লীগ নেতা ঢাকা থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন সিলেটের এক যুবলীগ নেতার বাড়িতে। এখান থেকে ভারতে পাড়ি জমানোর সময় জনতার হাতে পাকড়াও হন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে মেঘালয়ের জয়ন্তী হিলস জেলার এক পানের বরজ থেকে আওয়ামী লীগ নেতা ইসহাক আলী খান পান্নার গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। গত আগস্ট মাসের শেষ দিকে খুব কাছাকাছি সময়ে ওই দুইটি ঘটনা ঘটে। সংশ্লিষ্ট সূত্র ওই তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, বহুরূপী সিলেট জেলা যুবলীগের গ্রন্থনা-প্রকাশনা সম্পাদক লোকমান আহমদের বাড়ি শহরতলির মেজরটিলার মোহাম্মদপুরে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সিলেটের সকল আওয়ামী লীগ নেতা গা ঢাকা দেন। কিন্তু লোকমানসহ আরো কিছু নেতার বেলায় তার কিছু ব্যতিক্রম দেখা যায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার উপর হামলাকারী লোকমান নিজ বাড়িতে অবস্থান করতে থাকেন। ৫ আগস্ট দেখা গেছে কতিপয় হোমড়া চোমড়াকে লোকমানের বাড়িতে প্রবেশ করতে। গভীর রাতে ওই হোমড়া চোমড়ারা লোকমানের বাড়ি ছাড়েন। এর পর থেকে লোকমান বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। প্রায় সময় হোমড়া চোমড়ারাসহ বিএনপি নামধারী কতিপয় দুর্বৃত্ত এসে আড্ডা জমাতেন লোকমানের সাথে।
সূত্র আরো জানায়, কিছুদিন যেতেই লোকমানের কাছে খবর আসে আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকে তার জিম্মায় রেখে ভারতে পাঠাতে হবে। দুর্বৃত্ত চক্র যৌথভাবে তাদের মিশন সফল করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ১৯ আগস্ট লোকমানের জিম্মায় আসেন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। দুইদিন পর খবর আসে আওয়ামী লীগ নেতা ইসহাক আলী খান পান্না লোকমানের জিম্মায় আসবেন ২৩ আগস্ট। ওই অবস্থায় ২১ আগস্ট রাতে তড়িঘড়ি করে বিচারপতি মানিককে বিশেষ ব্যবস্থায় পাঠিয়ে দেয়া হয় কানাইঘাটের গ্রামের বাড়িতে। সেখান থেকে বিচারপতি মানিককে ২৩ আগস্ট ভারতে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। এর আগে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়। যার পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা হবে। কিন্তু ভাগ্য খারাপ। কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত হয়ে ভারতে পাড়ি জমানোর সময় স্থানীয় জনতার হাতে পাকড়াও হন বিচারপতি মানিক। পরে বিচারপতি মানিককে বিজিবি উদ্ধার করে পুলিশে সোপর্দ করে। ওইদিনই আওয়ামী লীগ নেতা ইসহাক আলী খান পান্না অবস্থান নেন লোকমান চক্রের কাছে। পরিস্থিতি ভালো নয়-এমন আশঙ্কায় পান্নাকে জৈন্তাপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাঠিয়ে দেয়া হয় ওইদিনই। পান্না ভারতে পৌঁছেছিল। কিন্তু ভাগ্য খারাপ। ২৬ আগস্ট ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে মেঘালয়ের জয়ন্তী হিলস জেলার এক পানের বরজ থেকে আওয়ামী লীগ নেতা ইসহাক আলী খান পান্নার গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। পান্নার সাথেও লোকমান চক্রের মোটা অঙ্কের টাকার লেনদেন হয়।
সূত্র জানায়, লোকমান ও তার চক্র ফ্যাসিস্টদের ভারতে পাঠানোর মিশন শুরু করতেই বড় ধরণের দুইটি হোচট খান। ফলে ওই পথ থেকে নিজকে গুটিয়ে নেন তিনি।
একাধিক সূত্র জানায়, লোকমান আহমদ মামলা থেকে রক্ষা পেতে জোর তৎপরতা শুরু করেন প্রথম থেকেই। ৫ আগস্টের পর লোকমান সতর্ক অবস্থানে অবস্থান নিয়ে নিজকে রক্ষা করেছিলেন। বিএনপি নামধারী দুর্বৃত্তদের সাথে লিয়াজো করে নিজকে অনেকটা রক্ষাও করেছিলেন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক কানাঘুষা চলে। অনেকটা প্রকাশ্যে চলে আসে লোকমানের তদবিরের বিষয়টি। শেষ পর্যন্ত সকল তদবির ব্যর্থ হয়ে যায়। গত ২ ফেব্রæয়ারি লোকমানের বিরুদ্ধে সিলেট কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। ৪ আগস্ট নগরীর মহাজনপট্টিতে তান্ডব পরিচালনাকারী লোকমানের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন রেজাউল ইসলাম নাহিদ।
এর আগে লোকমান যোগ দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামীতে। কিন্তু কোথায়ও ঠাঁই হয়নি। এখন তিনি একটি ইসলামী দলে যোগ দেয়ার মহড়া দিচ্ছেন।
বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, বহুরূপি লোকমান একটি মামলার আসামি হয়েছে। এছাড়া তিনি আরো কয়েকটি মামলার আসামি হবেন গ্রেফতার হওয়ার পরপরই। লোকমান এখন নানাভাবে চেষ্টা করছে নিজকে রক্ষা করার। কিন্তু বিষাক্ত এই ব্যক্তির বিষয়ে কঠোর অবস্থানে বিএনপি।
এর আগে প্রকাশিত প্রতিবেদন পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
বিএনপি নেতাদের ঘরে ঘরে দৌঁড় সিলেট যুবলীগ নেতা লোকমানের