নিউজ মিরর ডেস্ক
গত ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি (শনিবার ও রবিবার) মুসলিমকমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশন (এমসিএ)-এর ইসলামঅ্যাওয়ারনেস প্রজেক্ট (আইএপি) ইস্ট লন্ডন মসজিদে একটিবিশেষ ওপেন ডে ও ইসলামিক প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এইআয়োজনের মূল লক্ষ্য ছিল—অমুসলিমদের মাঝে ইসলামেরপ্রকৃত শিক্ষা ও বার্তা পৌঁছে দেওয়া, তাদের ভুল ধারণাগুলো দূরকরা এবং আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি বাড়ানো।
প্রদর্শনীর বৈচিত্র্যময় আয়োজন ও দর্শনার্থীদের প্রতিক্রিয়া
দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীতে অসংখ্য নন-মুসলিম দর্শনার্থীউপস্থিত হন, যাদের মধ্যে ছিলেন বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতিরঅনুসারী। প্রদর্শনীতে ইসলামের মৌলিক বিষয়াবলি, নবীমুহাম্মাদ (সা.)-এর জীবন, বিজ্ঞান ও ইসলামের সম্পর্ক, মানবাধিকার, নারীর মর্যাদা, ইসলামে ন্যায়বিচার এবং শান্তিরগুরুত্বসহ নানা বিষয়ে তথ্যবহুল ডিসপ্লে, ব্যানার ও মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনার ব্যবস্থা ছিল।
বেশ কয়েকজন দর্শনার্থী ইসলামের কিছু বিষয়ে প্রশ্ন ও সংশয়প্রকাশ করেন, বিশেষ করে ইসলাম সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ধারণানিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন। ইসলামিক স্কলার ও বিশেষজ্ঞরাতাদের প্রতিটি প্রশ্নের যৌক্তিক ও প্রমাণভিত্তিক উত্তর দেন, যাদর্শনার্থীদের মধ্যে যথেষ্ট ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনেকেইইসলামের শিক্ষার যুক্তিসঙ্গততা, মানবিকতা ও সার্বজনীনতাদেখে মুগ্ধ হন এবং নতুনভাবে ইসলাম সম্পর্কে জানার আগ্রহপ্রকাশ করেন।
প্রদর্শনীর অন্যতম দিক ছিল কিছু দর্শনার্থীর ইসলাম গ্রহণ। ইসলামের সত্য ও সুন্দর দিক দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তারাইসলামকে নিজের জীবনের পথ হিসেবে গ্রহণ করেন। আইএপি-এর সদস্যরা তাদের স্বাগত জানান এবং ইসলামসম্পর্কে প্রাথমিক শিক্ষা ও সহায়তা প্রদান করেন। নবাগতমুসলিমদের জন্য একটি বিশেষ প্রোগ্রাম পরিচালিত হয়, যেখানেতাদের ইসলামের মৌলিক জ্ঞান ও ধর্মীয় অনুশীলনের ভিত্তিগড়ে তোলার জন্য দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে, তারানিজেরাই ইসলাম প্রচারের কাজে অংশগ্রহণ করেন এবং নতুনআগ্রহীদের সঠিকভাবে ইসলামের বার্তা পৌঁছে দেন।
এই আয়োজনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল ইসলাম সম্পর্কে অবহিতকরার ক্ষেত্রে ধৈর্য, যুক্তি ও উদারতা প্রদর্শন করা। ইসলাম শান্তি, সহনশীলতা ও যুক্তির ধর্ম, যা মানুষকে চিন্তা করতে ও সত্যেরসন্ধান করতে উদ্বুদ্ধ করে। তাই এখানে আগত প্রত্যেকদর্শনার্থীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা হয় এবংইসলামিক দর্শন ও মূল্যবোধ তাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়বিজ্ঞানের যুক্তি ও ঐতিহাসিক প্রমাণের আলোকে।
বিশেষ অতিথিদের উপস্থিতি ও অভিমত:
প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিনে, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেনবিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার নাজীর আহমেদ এবং ইসলামচ্যানেলের প্রেজেন্টার জয়নুল আবেদিন। তারা প্রদর্শনী ঘুরেদেখেন, দাওয়াহ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন এবং নন-মুসলিম ও ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তিদের সাথে মতবিনিময় করেন। তারাএই আয়োজনের প্রশংসা করেন এবং বলেন যে, এরকম উদ্যোগনিয়মিত গ্রহণ করা হলে মুসলিম ও নন-মুসলিমদের মধ্যেসম্প্রীতি আরও বৃদ্ধি পাবে এবং ইসলামের প্রকৃত বার্তাবিশ্ববাসীর কাছে সঠিকভাবে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
টি অ্যান্ড টুর: ইসলামের সৌন্দর্য জানার সুযোগ:
আইএপি শুধু এই বিশেষ প্রদর্শনীর মধ্যেই নিজেদের কার্যক্রমসীমাবদ্ধ রাখেনি। তারা প্রতিমাসের শেষ শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২:৪৫ পর্যন্ত ইস্ট লন্ডন মসজিদে ‘টি অ্যান্ড টুর’ নামের একটি নিয়মিত আয়োজন পরিচালনা করে।
এতে মুসলিমদের উৎসাহিত করা হয়, যেন তারা তাদেরকর্মস্থলের সহকর্মী, প্রতিবেশী ও পরিচিত নন-মুসলিম বন্ধুদেরসঙ্গে নিয়ে আসেন এবং তাদের ইসলামের সৌন্দর্য ও মানবিকবার্তা সম্পর্কে অবহিত করেন। এই আয়োজনের মাধ্যমেইসলামের প্রতি আগ্রহী ব্যক্তিদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়, তাদের ভুল ধারণাগুলো দূর করার সুযোগ সৃষ্টি হয় এবংআন্তঃধর্মীয় সংলাপের একটি উন্মুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়।
ইস্ট লন্ডন মসজিদে আয়োজিত এই ওপেন ডে ও ইসলামিকপ্রদর্শনী শুধু একটি ধর্মীয় আয়োজন নয়, বরং এটি ছিলশিক্ষা, সচেতনতা ও সম্প্রীতির এক অপূর্ব সম্মিলন। ইসলামেরপ্রকৃত সৌন্দর্য এবং মানবতার প্রতি এর বার্তা নন-মুসলিমদেরকাছে তুলে ধরার জন্য এমন আয়োজনের গুরুত্ব অপরিসীম।
এই ধরনের উদ্যোগ সমগ্র সমাজের শান্তি, সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ইসলাম সম্পর্কে ভুলধারণা দূর করতে, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তুলতে এবংএকটি সুস্থ ও সংঘবদ্ধ সমাজ গঠনে এরকম প্রদর্শনী গুরুত্বপূর্ণভূমিকা পালন করবে বলে আয়োজকরা আশাবাদী।