কমলগঞ্জ সংবাদদাতা
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেড (এনটিসি”র) এর ফাঁড়িসহ ৮টি বাগানে চা-বাগানে ৪৯ দিন স্থবির হয়ে থাকে চা বাগান সমুহে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেয়ায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। শ্রমিকরা সোমবার ৬ সপ্তাহের মধ্যে দু’সপ্তাহের তলব (মজুরী) পেয়ে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল থেকে কাজে ফিরেছে চা শ্রমিকদের। জানুয়ারি মাসে বাকি ৪ সপ্তাহের মজুরি দেওয়া হবে।

আজ মঙ্গলবার সকালে উপজেলার মাধবপুর চা বাগানের ২ নং সেকশনে গিয়ে নারী শ্রমিকদের চা পাতা চয়ন করার দৃশ্য চোখে পড়ে। চয়নকারী নারীরা ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে কাজ করতে দেখা যায়। বিগত দিন সমুহে কাজে যোগ দিতে না পারায় এবং মজুরী না পাওয়ায় অর্ধাহারে তাদের মুখ মলিন হয়ে গিয়ে ছিল। এখন মজুরী পেয়ে তাদের মলিন মুখে হাসি ফোটে উঠেছে।

চা পাতা চয়নকালে নারী চা শ্রমিক বাসন্তী রাজগড়, ললিতা ভর, মালতি, শ্যামবতীদের সাথে আলাপকালে তারা জানায়, আমরা বকেয়া মজুরি না পেয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে কাজ করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাই কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলাম। সোমবার আমরা দুই সপ্তাহের তলব (মজুরি) পেয়ে আজ মঙ্গলবার কাজে যোগ দিয়েছি।

কাজ পরিদর্শনে থাকা মাধবপুর চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক রাশেদুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৪৯ দিন পর চা শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছে। এরই মধ্যে চা বাগানগুলোর অপুরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাবো কাজের মাধ্যমে কোম্পানির ক্ষতির কিছুটা হলেও পুষিয়ে দেয়ার। তবে কোম্পানি কোটি কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২২ আগস্ট থেকে ৬ সপ্তাহ মজুরি না পেয়ে কাজ বন্ধ রাখেন শ্রমিকরা। দীর্ঘদিন ধরে মজুরি না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন তারা।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল জানান, শ্রীমঙ্গল শ্রম অধিদফতর কার্যালয়ে চা শ্রমিকদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও ন্যাশনাল চা কোম্পানির যৌথ বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাদের বকেয়া ৬ সপ্তাহের মজুরি দুই থেকে তিন কিস্তিতে দেওয়া হবে। এরমধ্যে দুই সপ্তাহের মজুরি সোমবার দেওয়া হয়েছে। মজুরি পেয়ে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন।

ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেডের (এনটিসির) ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) শফিকুর রহমান মুন্না বলেন, চা শ্রমিকদের দুই সপ্তাহের বকেয়া মজুরি দেওয়া হয়েছে। মাসিক বেতনধারী শ্রমিকদের ২০ ডিসেম্বর ১ মাসের বেতন দেওয়া হবে। এখন থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন নিয়মিত পরিশোধ করা হবে। বাগানের কর্মচারীদের ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে ১ মাসের বেতন দেওয়া হবে। এছাড়া বাগান বন্ধের দিনগুলোর চা শ্রমিকদের রেশন কাটা হবে না। বোনাস ও বার্ষিক ছুটির দিন গণনার ক্ষেত্রে বাগান বন্ধের দিনগুলো অনুপস্থিত দেখানো হবে না। অবশিষ্ট বকেয়া মজুরি আগামী ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। একইসঙ্গে ২০২৫ সালের ৭ এপ্রিলের মধ্যে প্রভিডেন্ট ফান্ডের বকেয়া চাঁদা পরিশোধ করা হবে।